৭ ডিসে ২০২৫, রবি

মহাকাশ থেকে এবার দেখা গেল আটলান্টিকের রহস্যময় কাঠামো

বিজ্ঞানীরা মহাকাশ থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আটলান্টিক মহাসাগরের একটি অসাধারণ ছবি তুলেছেন। ছবিতে ৮ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত একটি বাদামি ফিতার মতো কাঠামো দেখা গেছে। প্রথমে এই ছবি দেখে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন, ক্যামেরায় কোনো ত্রুটি আছে। পরে তা নিশ্চিত হয় যে, এই কাঠামো মূলত গ্রেট আটলান্টিক সারগাসাম বেল্ট, যা সমুদ্রের অদ্ভুত ও বিস্ময়কর একটি বৈশিষ্ট্য।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আটলান্টিক মহাসাগরে সারগাসাম নামে পরিচিত বাদামি সামুদ্রিক শৈবালের বিশাল উত্থান হয়েছে। বিশালাকার এই শৈবাল কাঠামোর নাম দেওয়া হয়েছে গ্রেট আটলান্টিক সারগাসাম বেল্ট। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় শৈবাল কাঠামো। পশ্চিম আফ্রিকার উপকূল থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এই কাঠামোকে আটলান্টিকের বাদামি সাপও বলা হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আটলান্টিক মহাসাগরে থাকা গ্রেট আটলান্টিক সারগাসাম বেল্ট তৈরির পেছনে সমুদ্রের রসায়ন ও মানুষের প্রভাব রয়েছে। গত এক দশকে আমাজন, কঙ্গো ও মিসিসিপি নদীর মাধ্যমে আটলান্টিক মহাসাগরে কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার, অপরিশোধিত বর্জ্য, নগরীর আবর্জনাসহ বিভিন্ন বস্তু জমা হয়েছে। নদীগুলোর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ নাইট্রোজেন ও ফসফরাসও আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করেছে। এসব আবর্জনা ও রাসায়নিক পদার্থ সারগাসাম নামে পরিচিত বাদামি সামুদ্রিক শৈবালের দ্রুত বৃদ্ধিতে সারের মতো কাজ করেছে। এ ছাড়া সাহারা মরুভূমি থেকে উড়ে আসা সূক্ষ্ম ধূলিকণার কারণে আটলান্টিক মহাসাগরের লৌহ উপাদান বেড়ে যাওয়ায় শৈবালের বিস্তার দ্রুত হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোতের ধরন পরিবর্তনও বিশাল এই শৈবাল কাঠামো তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০১০ সালের দিকে নর্থ আটলান্টিক অসিলেশন স্রোতের ধরন পরিবর্তনের কারণে বাতাসের দিক ও স্রোতের গতি পরিবর্তন হয়েছে। এর ফলে সারগাসাম তার নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে সরে গিয়ে দ্রুত বাড়তে থাকার পাশাপাশি উপসাগরীয় স্রোত ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বায়ুর মাধ্যমে বিশাল অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

স্বাভাবিকভাবে সারগাসাম শৈবাল সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মাছ, কচ্ছপ ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীবনের জন্য খাদ্য ও আশ্রয় সরবরাহ করে। তবে গ্রেট আটলান্টিক সারগাসাম বেল্ট বিশাল এলাকাজুড়ে থাকায় প্রবাল প্রাচীর ও সি-গ্রাস বেডে ঠিকমতো সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে না। এতে সালোকসংশ্লেষণে বাধা সৃষ্টির পাশাপাশি পানিতে অক্সিজেন কমে যেতে পারে। ফলে গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *