দান-সদকার চেয়েও ঋণ পরিশোধ করা বেশি জরুরি


Emu Akter প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৫, ২০২৪, ৯:১৬ পূর্বাহ্ন /
দান-সদকার চেয়েও ঋণ পরিশোধ করা বেশি জরুরি
নিউজটি শেয়ার করুন

গরিব ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাধারণ দান-সদকা, সাহায্য-সহযোগিতা করা ইসলামে অন্যতম ইবাদত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে। তোমরা যা কিছুই ব্যয় করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯২)

অন্যদিকে জীবনের প্রয়োজনে ইসলামে ঋণ দেওয়া-নেওয়া বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঋণ দেওয়া উত্তম একটি আমল। এটি মানবতার কল্যাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী। ঋণদাতা কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে ভাগ্যবান মানুষ। ঋণ দিয়ে অন্যের প্রয়োজন পূরণে সাহায্য করা হয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর কোনো জুলুম করে না। তার সাহায্য ত্যাগ করে না। যে তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে থাকে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণে থাকেন। আর যে কোনো মুসলমানের একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলা তার কিয়ামতের দিনের বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪২)

তবে এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার করণীয় হলো, দ্রুততম সময়ে ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া। কেননা ঋণ বান্দার হক, যা পরিশোধ করা জরুরি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া উত্তম। মৃত্যুর আগে তো অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। পরিশোধের আগেই যদি কারো মৃত্যু এসে যায়, তবে কাউকে অসিয়ত করে যাওয়া আবশ্যক। আশা করা যায়, এতে সে মাফ পাবে। অন্যথায় পরকালে ঋণের কারণে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ঋণ ছাড়া শহীদের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৭৭৭)

দান-সদকা হলো ঐচ্ছিক। আর ঋণ হলো আবশ্যিক। তাই দান-সদকা করার চেয়েও ঋণ পরিশোধ করা বেশি জরুরি। একইভাবে বান্দার হক আদায় করা সাধারণ দান করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বান্দার হক দুই প্রকার। প্রথম প্রকার আর্থিক হক। যেমন—কেউ কারো কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করেনি। বা কারো সম্পদ অবৈধভাবে ছিনিয়ে নিয়েছে, আত্মসাত্ করেছে বা কারো থেকে ঘুষ নিয়েছে। এ জাতীয় সব হকের তালিকা তৈরি করে সব পরিশোধ করতে হবে।

এসব হকের পাওনাদার যারা, তারা জীবিত থাকলে এবং তাদের ঠিকানা জানা থাকলে এগুলো পরিশোধ করা সহজ। তারা মারা গেলে তাদের ওয়ারিশদের খুঁজে তাদের অধিকার আদায় করতে হবে। খোঁজ করা সত্ত্বেও তাদের ঠিকানা জানা না গেলে তাদের প্রাপ্য পরিমাণ অর্থ তাদের তরফ থেকে দান করে দেবে।

বান্দার হকের দ্বিতীয় প্রকার শারীরিক হক। যেমন—কাউকে হাত বা জিহ্বা দ্বারা শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া কষ্ট দেওয়া, কাউকে গালি দেওয়া, পরনিন্দা করা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে বান্দার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া জরুরি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা কি বলতে পার, নিঃস্ব কে? সাহাবিরা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যার টাকা-কড়ি ও আসবাবপত্র নেই, সেই তো নিঃস্ব। তখন তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই প্রকৃত নিঃস্ব, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও জাকাতের আমল নিয়ে উপস্থিত হবে; অথচ সে এই অবস্থায় আসবে যে, একে গালি দিয়েছে, একে অপবাদ দিয়েছে, এর সম্পদ আত্মসাত্ করেছে, একে হত্যা করেছে ও একে মেরেছে। এরপর একে তার নেক আমল থেকে দেওয়া হবে, ওকে নেক আমল থেকে দেওয়া হবে। এরপর তার কাছে (পাওনাদারের) প্রাপ্য তার নেক আমল থেকে পূরণ করা না গেলে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৭৩)