পবিত্র রমজান মাসে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, মটর ডাল, চিনিসহ ছয় ধরনের পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার বেড়েছে। কারণ, রমজান মাসে এসব পণ্যের চাহিদা সাধারণত অনেক বেড়ে যায়। এ জন্য আগেভাগেই পণ্যগুলো আমদানির ঋণপত্র খোলা বাড়িয়েছেন ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা আমদানিতে ঋণপত্র খোলা কমে গেছে। এর মধ্যে সামনের মাসে পেঁয়াজের নতুন মৌসুম শুরু হবে বলে এটির জন্য এলসি খোলা কমেছে। অবশ্য পেঁয়াজ আমদানিতে সরকারের অনুমোদন নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কোনো কোনো পণ্যের ঋণপত্র খোলার হার ১১ থেকে ২৯৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ঋণপত্র খোলার পর পণ্য আসতে তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগে। সে অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির আগেই এসব পণ্য দেশে চলে আসার কথা। চলতি মাসে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে আরও বেশি পরিমাণে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে বলে জানান ব্যাংকাররা।
শীর্ষস্থানীয় ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রেফাত উল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে এখন ডলারের কোনো সংকট নেই। ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকেরা চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছেন। এ ছাড়া ঘোষিত দামেই ডলার পাচ্ছেন সবাই। এতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে। আশা করা যায়, আমদানি হয় এমন সব পণ্যের কোনো ঘাটতি হবে না।’
দুই পণ্যে প্রবৃদ্ধি ২০০%×বেশি
দেখা গেছে, আলোচ্য সময়ে খেজুর আমদানিতে ঋণপত্র খোলার হার ২৩১ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ৩ হাজার ৬৩ মেট্রিক টন খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। চলতি বছরের একই সময়ে ১০ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন খেজুর আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। মটর ডালের জন্য ঋণপত্র খোলার হার ২৯৪ শতাংশ বেড়েছে, যা আমদানি হওয়া ৯টি পণ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ৪১ হাজার ৮১৫ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে চলতি বছরের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন।
দেশে এখন ডলারের কোনো সংকট নেই। ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকেরা চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছেন। এ ছাড়া ঘোষিত দামেই ডলার পাচ্ছেন সবাই। এতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে। আশা করা যায়, আমদানি হয় এমন সব পণ্যের কোনো ঘাটতি হবে না।
তারেক রেফাত উল্লাহ খান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্র্যাক ব্যাংক।
অন্য পণ্যে ঋণপত্র খোলার চিত্র
গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে সর্বাধিক ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের (সয়াবিন) ঋণপত্র খোলার হার ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬৫ মেট্রিক টনের, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন। আলোচ্য সময়ে ৫৪ হাজার ৫১৬ মেট্রিক টন ছোলা আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৪২ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টনের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি।
মটর ডাল ছাড়া অন্যান্য ডাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলা ৮৭ শতাংশ বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডাল আমদানির ঋণপত্র ২৬ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ৫০ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন হয়েছে। ২ লাখ ৯২ হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন চিনি আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এখন কোনো মার্জিন ছাড়াই ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে খেজুরসহ কিছু পণ্য দেশে এসে গেছে। সামনে আরও আসবে। এবার আমদানিতে ডলারের কোনো সংকট নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত দামেই ডলার পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল সোমবার ব্যাংকগুলোয় আমদানির এলসি খুলতে ডলারের দাম ছিল ১২২ টাকা ৮০ পয়সা।
কমেছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার ঋণপত্র
পেঁয়াজ আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার হার প্রায় ৯৯ শতাংশ কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল, যা কমে এবার মাত্র ২০৩ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। এ ছাড়া রসুনের ঋণপত্র খোলার হার গত বছরের তুলনায় ৮৯ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৬১৪ মেট্রিক টনে নেমেছে। গত সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে ১৪ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন আদা আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ শতাংশ কম।
সার্বিক আমদানি বাড়ছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে সার্বিকভাবে ঋণপত্র খোলায় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র দশমিক ১৮ শতাংশ। আর চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে ঋণপত্র খোলা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়েছে। খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি মূলধনি যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
এদিকে ঋণপত্র খোলা বাড়লেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দিন দিন কমছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত বছরের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে নেন। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদ বদলে দেওয়া ১৫টি ব্যাংক তাদের ঋণ কার্যক্রমও কমিয়ে দিয়েছে।

