৭ ডিসে ২০২৫, রবি

বেলজিয়াম জাতের হাঁস পালনে লাখপতি দুই যুবক

নাটোরের সিংড়া উপজেলার নুরপুর গ্রামে বেলজিয়াম জাতের হাঁস পালন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। প্রতিটি হাঁসের গড় ওজন ৪ থেকে ৫ কেজি হওয়ায়—এ জাতের হাঁসের মাংস ও ডিমের বাজার চাহিদা এখন বেশ শক্তিশালী। আর এই হাঁস পালন করেই সিংড়ার দুই তরুণ—সালা-দুলাভাই জাহিদ মাহমুদ ও আবু হাসান—‘চলনবিল হ্যাচারি সিংড়া’ গড়ে তুলেছেন সাফল্যের অনন্য উদাহরণ হিসেবে।

সিংড়ার তরুণ খামারি জাহিদ মাহমুদ কয়েক বছর আগেও ছিলেন ঋণগ্রস্ত। জীবনের নানান সংকটে পড়ে একসময় হাঁস পালনের পরিকল্পনা করেন তিনি—আর সেই এক সিদ্ধান্তই পাল্টে দেয় তাঁর জীবন।

জাহিদ বলেন, তখন আমার প্রায় ৮ লাখ টাকার ঋণ ছিল। একদিন প্রবাসী দুলাভাই হাসান আলীর সঙ্গে কথা বলি। তিনি উৎসাহ দেন এবং টাকা দিয়ে ১০০টি বেলজিয়াম হাঁস কিনে দেন। সেখান থেকেই আমার শুরু।

মাত্র চার বছরেই সেই ছোট উদ্যোগ আজ বড় বাণিজ্যিক খামারে রূপ নিয়েছে। বর্তমানে তাদের খামারে হাঁসের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। হাঁসের পাশাপাশি তারা এখন বাচ্চা উৎপাদনও করছেন। বছরে এই খামার থেকে আয় হচ্ছে ২৪ লাখ টাকারও বেশি।

জাহিদ আরও বলেন, আমরা এখন প্রতি মাসে দুই লাখ টাকার বেশি আয় করি। ডিম, বাচ্চা ও হাঁস বিক্রির আয়ে সব ঋণ শোধ করেছি। এখন নিজেই অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছি।

খামারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি হাঁস ৪৫ দিনের মধ্যেই প্রায় ৩ কেজি ওজনের হয়ে যায়। ফলে স্বল্প সময়েই বিক্রিযোগ্য হয়। একটি হাঁসের ডিম ৪০ থেকে ৮০ টাকায় এবং প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

খামারে বর্তমানে ৪ জন স্থানীয় যুবক স্থায়ীভাবে কাজ করছেন। এতে শুধু জাহিদ ও হাসানই নয়, আশপাশের বেকার তরুণরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন হাঁস পালনে।

খামারি আবু হাসান জানান, স্বল্প পুঁজি দিয়ে বেলজিয়াম জাতের হাঁস পালন শুরু করা সম্ভব। নিয়মিত যত্ন, সঠিক খাবার ও ভ্যাকসিন দিলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। হাঁসগুলো দ্রুত বড় হয়, তাই দ্রুত লাভও পাওয়া যায়।

জাহিদ বলেন, একসময় মানুষ বলত হাঁস পালনে ভবিষ্যৎ নেই। এখন তারাই এসে জানতে চান, কীভাবে এত লাভ করছি। আরও তরুণ এগিয়ে এলে আমরা সহযোগিতা করব।

সিংড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাশরিফুল ইসলাম জানান, নতুন উদ্যোক্তাদের আমরা সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছি। হাঁস পালনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট, পরামর্শ ও ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হয়। বর্তমানে উপজেলায় বেলজিয়াম জাতের একটি বড় খামার রয়েছে। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *