মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে চলছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ হালাল পণ্যের মেলা। সেখানে বাংলাদেশের পণ্যও আছে।
এই হালাল পণ্যের তালিকায় বিভিন্ন ফ্লেভারের নুডলস, বিস্কুট, জুস কিংবা মাছ–মাংসের মতো প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের সমাহার আছে। পাশাপাশি পোশাক, লিপস্টিক ও সুগন্ধির মতো জীবনযাপন ও সৌন্দর্যবর্ধনের সামগ্রী আছে। আরও আছে হালাল পণ্য তৈরি করার নানা যন্ত্রপাতি।
এ ধরনের হাজার হাজার হালাল পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত মিহাস ফেয়ার বা হালাল পণ্যের প্রদর্শনীতে। মালয়েশিয়া বহির্মুখী বাণিজ্য উন্নয়ন করপোরেশনের (ম্যাট্রেড) আয়োজনে আজ বুধবার সকালে এ মেলা শুরু হয়েছে। চার দিনব্যাপী এ মেলা চলবে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এতে বিশ্বের ৯০টি দেশ থেকে ২ হাজার ৩০০টি স্টলে পণ্য প্রদর্শন করছে হালাল পণ্যের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন দেশের কোম্পানি।
রাজধানী কুয়ালালামপুরের মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও প্রদর্শনী কেন্দ্রে (মিটেক) মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস বা মিহাসের এটি ২১তম আসর।
সরেজমিনে যা দেখা গেল
এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড প্রাণ অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশি প্রাণ ব্র্যান্ডের ৫০০–এর বেশি পণ্য মেলায় প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। প্রাণের পণ্য নিয়ে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের মধ্যেও বেশ আগ্রহ আছে। এবারের আসরে প্রাণ দুটি স্টলের মাধ্যমে পাঁচ শতাধিক পণ্য প্রদর্শন করছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্ন্যাকস, জুস ও ড্রিংকস, কালিনারি (নুডলস, সস প্রভৃতি) পণ্য, বিস্কুট ও বেকারি এবং বিভিন্ন কনফেকশনারি (চকলেট, বাবলগাম, ক্যান্ডি) পণ্য।
সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রাণের স্টল দুটিতে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা এসে পণ্যের খোঁজ নিচ্ছেন।
দর্শনার্থীদের একজন সিঙ্গাপুরের ভোগ্যপণ্যের পাইকারি ব্যবসায়ী শিবা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলায় এসে প্রাণের তৈরি কারি ফ্লেভারের নুডলস খেয়ে দেখলাম। এটি বেশ সুস্বাদু। আশা করছি, সিঙ্গাপুরেও এটির ভোক্তা চাহিদা পাব।’
শিবা আরও বলেন, ‘আমি শুধু নেসলের নুডলস বিক্রি করি। এখন নতুন আরেকটি ব্র্যান্ডও যুক্ত করতে চাই। এ জন্য প্রাণের কারি ফ্লেভারের এক কনটেইনার নুডলস অর্ডার করব ভাবছি।’
মালয়েশিয়ায় প্রাণের পণ্যের একমাত্র আমদানিকারক পিনাকল ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা নতুন কিছু পণ্যে বেশি জোর দেব। এর মধ্যে রয়েছে কোরিয়ান নুডলস, বিভিন্ন বিস্কুট ও বাসিল সিড ড্রিংকস।’
সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘এবারের মেলায় প্রাণের প্রধান লক্ষ্য, আসিয়ানভুক্ত দেশ, দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপের দেশে হালাল পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা। এর মাধ্যমে মেলা থেকে ২০ লাখ ডলার সমমানের পণ্যের সরাসরি রপ্তানি আদেশ পাব বলে আশা করছি আমরা।’
মালয়েশিয়াকে হালাল পণ্যের অন্যতম বৃহৎ বাজার উল্লেখ করে প্রাণের কর্মকর্তারা জানান, এর পাশাপাশি প্রতিবেশী ব্রুনেই ও ইন্দোনেশিয়ায় হালাল পণ্যের বড় বাজার রয়েছে। এসব বাজারে রপ্তানি পণ্যের সম্প্রসারণ করতে চায় প্রাণ গ্রুপ।
পিনাকল ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম ভূঁইয়া জানান, মালয়েশিয়ার মিহাস ফেয়ার হালাল অর্থনীতিতে প্রবেশের জন্য ব্যাপক সুযোগ তৈরি করে। কারণ, মিহাস ফেয়ারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা তাঁদের প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহের জন্য হাজির হন। আবার অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে হালাল পণ্যের বাজার সম্পর্কে ধারণা পান এবং সে অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যবস্থায় নিজেদের তৈরি করেন। তাই বিশাল এই অর্থনীতিতে প্রবেশ করতে মিহাস ফেয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে চলছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ হালাল পণ্যের মেলা। মেলায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশি ব্র্যান্ড প্রাণের স্টলে আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে চলছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ হালাল পণ্যের মেলা। মেলায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশি ব্র্যান্ড প্রাণের স্টলে আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরাছবি: প্রথম আলো
৯০টি দেশ অংশ নিয়েছে
মালয়েশিয়া বহির্মুখী বাণিজ্য উন্নয়ন করপোরেশন (ম্যাট্রেড) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মিহাস ২০২৫–এ বাংলাদেশসহ ৯০টি দেশের ২ হাজার ৩০০ বুথ ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শক অংশ নিচ্ছেন। প্রায় ৪৫ হাজার দর্শনার্থীর উপস্থিতি আশা করছে আয়োজকেরা।
হালাল খাদ্য ও পানীয়, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ইসলামিক অর্থায়ন, ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পণ্য, ব্যক্তিগত যত্ন, প্রসাধনী ও মুসলিমবান্ধব পর্যটন—সব মিলিয়ে একটি সমন্বিত প্রদর্শনীর সুযোগ তৈরি হয়েছে এ মেলায়। ২০২৪ সালে মিহাস মেলা থেকে ৪৩০ কোটি রিঙ্গিত বিক্রির রেকর্ড হয়েছিল। এ বছর নতুন মাইলফলক সৃষ্টির আশা করছে তারা।
বাংলাদেশের প্রাণের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার প্রায় তিন লাখ কোটি (তিন ট্রিলিয়ন) ডলারের কাছাকাছি। বিশ্বের ২০০ কোটির বেশি মুসলিম জনসংখ্যা এই পণ্যের প্রধান ক্রেতা। এ ছাড়া অন্য গ্রাহকের কাছেও মান ও পুষ্টিগুণের বিবেচনায় এ পণ্যের চাহিদা রয়েছে। মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়া বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় হালাল পণ্যের বাজার তৈরি হয়েছে।
২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর মিহাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে মালয়েশিয়ার প্রাণকেন্দ্র কুয়ালালামপুরে। ২০১৩ সাল থেকে এ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে প্রাণ। মিহাস মেলা ছাড়া প্রাণ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গালফ ফুড ফেয়ার, জার্মানির আনুগা, ফ্রান্সের সিয়াল ফেয়ারসহ খাদ্যপণ্যের জন্য বিখ্যাত সব মেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছে।
Leave a Reply