৭ ডিসে ২০২৫, রবি

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম অচলাবস্থা নিরসনে বিলে স্বাক্ষর করলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থার (শাটডাউন) অবসান ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার একটি বিলে স্বাক্ষর করেছেন। এর কয়েক ঘণ্টা আগে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে খাদ্যসহায়তা আবার চালু, লক্ষাধিক সরকারি কর্মচারীর বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং উড়োজাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের পক্ষে ভোট দেন কংগ্রেস সদস্যরা।

রিপাবলিকাননিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে ২২২২০৯ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। ট্রাম্পের সমর্থন তাঁর দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে। অবশ্য কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা তীব্রভাবে প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তাঁরা ক্ষুব্ধ, কারণ সিনেটে দীর্ঘ অচলাবস্থা সত্ত্বেও ফেডারেল স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো চুক্তি করা যায়নি।

সপ্তাহের শুরুতেই সিনেটে পাস হওয়া বিলটিতে ট্রাম্পের স্বাক্ষরের ফলে আজ বৃহস্পতিবার থেকেই সরকারি কর্মচারীরা কাজে ফেরার সুযোগ পাবেন। অচলাবস্থার কারণে তাঁদের ৪৩ দিনের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। তবে আইনটিতে ট্রাম্পের স্বাক্ষরের পরও সরকারি সেবা ও কার্যক্রম পুরোদমে কবে স্বাভাবিক হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

হোয়াইট হাউসে বুধবার রাতে আইনটিতে স্বাক্ষর করার সময় ট্রাম্প বলেন, এটা আর কখনো ঘটতে দেওয়া যাবে না। এভাবে কোনো দেশ চালানো যায় না।

দুই পক্ষের চুক্তির ফলে সরকারের অর্থায়ন আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৩৮ ট্রিলিয়ন (৩৮ লাখ কোটি ডলার) ডলারের ঋণের সঙ্গে প্রতিবছর আরও প্রায় ১ লাখ ৮০ কোটি ডলার ঋণ যোগ হবে।

অ্যারিজোনার রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ডেভিড শোয়েইকার্ট কিছু কৌতুক করে বলেন, ‘আমি মনে করেছি, যেন সেইনফেল্ড সিরিজের কোনো পর্বে আছি। আমরা ৪০ দিন পার করলাম। অথচ এখনো বুঝতে পারছি না, গল্পটা কী নিয়ে ছিল।’

শোয়েইকার্ট আরও বলেন, ‘ভাবছিলাম, ব্যাপারটা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। সবাই একটু রাগ ঝেড়ে নেবে, তারপর কাজে ফিরবে। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে, রাগটাই নীতি হয়ে গেছে!’

ভ্রমণ, অর্থনীতি ও সেবায় প্রভাব

এ অচলাবস্থা শেষ হওয়ায় আশার আলো দেখা দিয়েছে বিশেষ করে বিমান চলাচল ব্যবস্থায়। দুই সপ্তাহ পরই থ্যাংকসগিভিং উপলক্ষে ছুটি এবং ভ্রমণ মৌসুম শুরু হচ্ছে।

খাদ্যসহায়তা আবার চালু হলে লাখ লাখ পরিবার কিছুটা আর্থিক স্বস্তি পাবে। বড়দিনের কেনাকাটা মৌসুমে ভোক্তা ব্যয় বাড়াতে এটি সহায়তা করবে।

অচলাবস্থার কারণে অর্থনীতিসম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পরিসংখ্যান (যেমন কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতি ও ভোক্তা ব্যয়ের তথ্য) প্রকাশ বন্ধ ছিল। ফলে বিনিয়োগকারী, নীতিনির্ধারক ও সাধারণ মানুষ অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অনিশ্চয়তায় ছিলেন।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, অক্টোবর মাসের চাকরির হার ও মূল্যসূচক (সিপিআই)সংক্রান্ত প্রতিবেদন হয়তো আর কখনো প্রকাশ করা হবে না। অর্থাৎ কিছু তথ্য স্থায়ীভাবে হারিয়ে গেছে।

অর্থনীতিবিদদের হিসাব অনুযায়ী, ছয় সপ্তাহ ধরে চলা অচলাবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রতি সপ্তাহে প্রায় শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমে গেছে। তবে আগামী মাসগুলোতে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যবিমায় কোনো নিশ্চয়তা নেই

এই ভোট এমন এক সময়ে হয়েছে, যার মাত্র আট দিন আগে ডেমোক্র্যাটরা বেশ কিছু বড় নির্বাচনে জয় পেয়েছেন। তাঁদের ধারণা ছিল, এতে তাঁরা বছরের শেষে শেষ হয়ে যাওয়া ফেডারেল স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকির সময়সীমা বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন।

চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরে সিনেটে এ নিয়ে ভোট হবে। কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি।

নিউ জার্সির ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি এবং নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের নবনির্বাচিত গভর্নর মিকি শেরিল কংগ্রেস থেকে পদত্যাগের আগে হাউসে তাঁর শেষ ভাষণে বিলটির বিরোধিতা করেন।

শেরিল বলেন, ‘আমার সহকর্মীদের বলব, কংগ্রেস যেন এমন একটি প্রশাসনের জন্য কেবল এক আনুষ্ঠানিক সিলমোহর হয়ে না যায়, যারা শিশুদের মুখের খাবার কেড়ে নেয় ও মানুষের স্বাস্থ্যসেবাকে ছেঁটে ফেলে। দেশের জনগণকে বলব, দৃঢ় থাকুন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *