৭ ডিসে ২০২৫, রবি

সংযত ভাষার শান্তি, অসংযমে সর্বনাশ

কথা বলার ক্ষমতা—এটা এমন এক ক্ষমতা, যা মানুষকে চিন্তা, অনুভূতি ও জ্ঞানের প্রকাশ ঘটানোর অনন্য সুযোগ করে দেয়। আল্লাহ তাআলা মানুষকে এই ক্ষমতা দান করেছেন এবং তিনি তার সঠিক ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনাও দান করেছেন। কোরআন-হাদিসে আছে ভাষা ও কথার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কিত শত শত নির্দেশনা। ভাষার সঠিক ব্যবহার করা, সততার সঙ্গে কথা বলা এবং বক্তব্যে সংযম ও গাম্ভীর্যতা বজায় রাখা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও সংস্কারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য-সঠিক কথা বলো। তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের আমল পরিশুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে সে মহা সাফল্য অর্জন করল।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭০-৭১)

সত্য ও ন্যায় কথা বলা এবং সুন্দর, মার্জিত ও কল্যাণকর বক্তব্য প্রদান—এসব ইসলামের মৌলিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত।

একজন মুসলমানের চরিত্রের পূর্ণতা এবং সমাজে তার প্রভাবের অন্যতম পরিচায়ক হলো তার মুখের কথা।

সত্যবাদিতা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরব থাকে।’ (সহিহ বুখারি, ৬৪৭৫)

একজন প্রকৃত মুমিনের মুখে কখনো অশালীন, অশ্রাব্য কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যপূর্ণ কথা মানায় না।

তার মুখ সর্বদা যেন হয় সততা, নম্রতা ও শিষ্টাচারের প্রতিচ্ছবি। আবু দারদা (রা.) বা অন্য সাহাবাদের সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, মুমিন সেই ব্যক্তি নয়, যে অভদ্রভাবে কথা বলে, গালাগাল করে, অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে কিংবা নিন্দা-অপবাদে লিপ্ত থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৭)

এর থেকে স্পষ্ট হয় যে ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং তা ঈমানেরও একটি পরীক্ষা। একজন মুমিনের জিহ্বা যদি অন্যের সম্মান রক্ষায় ব্যর্থ হয়, তবে তার ঈমান পূর্ণতা পায় না। তাই তিনি এমন ভাষা, আচরণ ও উচ্চারণকে নিন্দা করেছেন, যা মানুষের অন্তরে কষ্ট দেয় এবং তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে।

তাবেঈ হাসান বসরি (রহ.) বলতেন, ‘কোনো ব্যক্তির আমানতদারি তখনই সঠিক হয়, যখন তার জিহ্বা সোজা থাকে। আর জিহ্বা তখনই সোজা হয়, যখন তার অন্তর সোজা হয়।’ (বাহজাতুল মজালিস : ২/৫৭৬)

অন্তরের শুদ্ধতা থেকেই জন্ম নেয় জিহ্বার সততা। আর জিহ্বার সততা মানুষকে করে তোলে সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও বিশ্বাসযোগ্য, যা প্রকৃত ঈমানদারের অন্যতম গুণ।

বিশিষ্ট তাবেঈ হজরত ইউনুস ইবনে উবাইদ (রহ.) বলতেন—‘কোনো বান্দার মধ্যে যদি দুটি জিনিস সঠিক থাকে, তাহলে তার বাকি সব কিছুই ঠিক হয়ে যায়। সে দুটি হলো—তার নামাজ ও তার জিহ্বা।’ (সিয়ার আলামিন নুবালা : ৬/২৮৮)

নামাজের পর মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তার জিহ্বা। আর এই মহান নিয়ামতের (জিহ্বার) প্রকৃত কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দাবি হলো—মানুষ যেন নিজের কথাবার্তাকে ওপরে উল্লিখিত নির্দেশনার অধীন করে, নিজের জিহ্বাকে সংযত রাখে এবং কথা বলার দায়িত্বকে একটি গম্ভীর কাজ হিসেবে গ্রহণ করে। সে যেন কথা বলার আগে তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক ফলাফল নিয়ে চিন্তা করে এবং জিহ্বার সঠিক ব্যবহার শিখে নেয়।

প্রত্যেক মুমিনের উচিত নিজের জিহ্বাকে সংযমের পথে পরিচালিত করা, কথাবার্তায় প্রজ্ঞা ও কল্যাণ বজায় রাখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *