৭ ডিসে ২০২৫, রবি

ফজরের নামাজে জেগে উঠার কিছু অভ্যাস

ফজরের নামাজ হলো আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ইবাদতগুলোর একটি। কিন্তু দুঃখজনক হলো যে এ সময়ে ঘুমের ঘোরে কাটিয়ে দিই অথচ সামন্য কিছু অভ্যাস ও নিয়ম মেনে চললে ফজরে জাগ্রত হওয়া কঠিন নয়। যেমন—

১. তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া

রাসুল (সা.) মাগরিবের নামাজের আগে ঘুমানো এবং ইশার নামাজের পরে অনর্থক কথা বলা অপছন্দ করতেন। আবু বারযা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) মাগরিবের আগে ঘুমানো এবং এশার নামাজের পর কথা বলা অপছন্দ করতেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৬৮)

২. পবিত্র অবস্থায় ঘুমানো

তাড়াতাড়ি ঘুমানোর সঙ্গে সঙ্গে উচিত পবিত্র অবস্থায় ঘুমানো, ঘুমানোর আগে নির্ধারিত দোয়া পাঠ করা এবং সুন্নাহ অনুযায়ী ডান কাতে শুয়ে পড়া।

৩. নিয়ত করা ও দৃঢ় সংকল্প করা

ঘুমাতে যাওয়ার সময় দৃঢ় নিয়ত করো—‘আমি ফজরের নামাজ জামাতে পড়ব।’ যে ব্যক্তি মনে মনে ভাবে ‘অ্যালার্ম নাও বাজতে পারে, কেউ হয়তো ডাকবেও না’—তার হৃদয় আসলে গাফেল ও দুর্বল, তাই সে জাগতে পারবে না। আন্তরিক ইচ্ছা ও নিয়তই জাগার প্রথম প্রেরণা।

৪. ঘুম থেকে উঠেই আল্লাহকে স্মরণ করা

অনেকেই ঘুম থেকে উঠে আবার শুয়ে পড়ে। কিন্তু তুমি যদি জাগার সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহকে স্মরণ করো, তাহলে শয়তানের বাধা একে একে খুলে যাবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ঘুমায়, শয়তান তার মাথার পেছনে তিনটি গিঁট বেঁধে দেয় এবং প্রতিটি গিঁটে বলে—‘তোমার সামনে এখনো অনেক রাত বাকি আছে, ঘুমাও।’ যদি সে জেগে ওঠে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে, একটি গিঁট খুলে যায়।

যদি অজু করে, দ্বিতীয়টি খুলে যায়। আর যদি নামাজ পড়ে, সব গিঁট খুলে যায়। তখন সে উদ্যমী ও প্রফুল্ল হয়; অন্যথায় সে অলস ও মনমরা অবস্থায় জাগে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৪২)

৫. একে অন্যকে সহযোগিতা করা

পরিবার ও প্রতিবেশীদের একে অপরকে নামাজে জাগানোর জন্য উৎসাহিত করো। স্ত্রী স্বামীকে জাগাতে পারে, সন্তান পিতাকে ডাকতে পারে—এভাবেই পারিবারিক নামাজের পরিবেশ গড়ে ওঠে।

আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার পরিবারকে নামাজের আদেশ দাও এবং এতে অবিচল থাকো। আমরা তোমার কাছ থেকে রিজিক চাই না; আমরা তোমাকে রিজিক দিই। আর উত্তম পরিণাম তাকওয়ার জন্য।’ (সুরা : ত্বাহা, আয়াত : ১৩২)

৬. অ্যালার্ম ব্যবহার করা

একটি অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করো এবং সেটি বিছানা থেকে দূরে রাখো, যেন অ্যালার্ম বন্ধ করতে উঠে দাঁড়াতেই হয়। এতে ঘুম ভাঙা সহজ হয় এবং অলসতা দূর হয়।

৭. ঘুমন্ত ব্যক্তিকে পানি ছিটিয়ে জাগানো

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ রহম করুন ওই পুরুষের প্রতি, যে রাতে উঠে নামাজ পড়ে এবং তার স্ত্রীকে জাগায়; যদি সে উঠতে অস্বীকার করে, তবে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। এবং আল্লাহ রহম করুন সেই নারীর প্রতি, যে রাতে উঠে নামাজ পড়ে এবং তার স্বামীকে জাগায়; যদি সে উঠতে না চায়, তবে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩০৮)

৮. জাগ্রত হওয়ার পর দ্রুত উঠে পড়া

ঘুম থেকে ওঠার পর দেরি না করে দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠতে হবে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) যখন প্রথম আজান শুনতেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে উঠতেন।’ আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ বলেন, ‘আল্লাহর কসম! তিনি শুধু উঠে পড়েননি, বরং দ্রুত উঠে দাঁড়াতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৪৬)

৯. দুপুরে অল্প বিশ্রাম নেওয়া

দুপুরের পর অল্প সময় ঘুমানো বা বিশ্রাম নেওয়া ফজরের নামাজের জন্য সহায়ক। এতে শরীর ও মন দুটিই সতেজ হয়, ফলে রাতে নামাজের জন্য ওঠা সহজ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং যখন তোমরা দুপুরে তোমাদের পোশাক খুলে রাখো…।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৫৮)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুপুরে কিছুটা বিশ্রাম নাও, কেননা শয়তান বিশ্রাম নেয় না।’ (সহিহ বুখারি : ৪৪৩১)

১০. পাপ ও গুনাহ থেকে দূরে থাকা

গুনাহ হৃদয়কে অন্ধ ও কঠিন করে দেয়, ফলে নামাজের আগ্রহ কমে যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পরীক্ষা (ফিতনা) হৃদয়ের সামনে উপস্থাপিত হবে যেমন একটি চাটাই একটার পর একটা লাঠির মতো বিছানো হয়। যে হৃদয় তা গ্রহণ করবে, তার মধ্যে একটি কালো দাগ পড়বে, আর যে হৃদয় তা প্রত্যাখ্যান করবে, তার মধ্যে একটি সাদা দাগ পড়বে; এমনকি শেষ পর্যন্ত দুটি ভিন্ন হৃদয় সৃষ্টি হবে—একটির হৃদয় হবে উজ্জ্বল ও পবিত্র, পাথরের মতো মসৃণ, যা কোনো ফিতনা দ্বারা প্রভাবিত হবে না; আর অন্যটি হবে কালো, ধুলাময় ও উল্টা করে রাখা কলসির মতো, যা না ভালো চিনবে, না মন্দ থেকে বিরত থাকবে, বরং নিজের কামনার দাসে পরিণত হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩১)

বাস্তব জীবনের একটি শিক্ষা : একজন জেল কর্মকর্তা বলেছিলেন, “আমি ৪০ বছর ধরে কারাগারে কাজ করেছি। এই সময়ে যেসব মানুষ কারাগারে এসেছে, আমি প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করেছি : যেদিন তোমার জীবনে এই বিপর্যয় এসেছিল, সেদিন কি তুমি ‘এশা’ ও ‘ফজর’-এর নামাজ জামাতে আদায় করেছিলে?” তিনি বলেন, একজনও এমন মানুষ পাইনি, যে সেই রাতে দুই নামাজই জামাতে পড়েছিল।’ অতএব, নামাজ মানুষকে শুধু আল্লাহর কাছাকাছি করে না, বরং তাকে দুনিয়ার বিপদ থেকেও রক্ষা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *