বাগেরহাটের ফকিরহাটে এবার সুপারির ভরা ফলন হয়েছে। প্রয়োজন মতো বৃষ্টি হওয়ায় এবং রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় ফলন যেমন ভালো, দামও আশানুরূপ। এতে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ফকিরহাট উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২৫০ হেক্টর জমিতে সুপারির ফলন হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৭ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন হিসেবে প্রায় এক হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদিত হয়েছে। তবে স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীদের মতে, প্রকৃত উৎপাদন সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়েও বেশি।
সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার বাহিরদিয়া, লখপুর, পিলজঙ্গসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সুপারি বাগানে গাছে গাছে ঝুলে আছে পরিপক্ক সুপারি। বড় বড় কাধিতে থোকায় থোকায় সুপারিতে হলুদ রং ধারণ করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় দেড় হাজার সুপারির বাগান রয়েছে।
পিলজঙ্গএলাকার সুপারি বাগানের মালিক শেখ সেলিম ও জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বাহিরদিয়া এলাকার কার্তিক সাহা জানান, এ বছর গাছে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ সুপারি ধরেছে। বেশিরভাগ ফল বড় ও হৃষ্টপুষ্ট হলেও কিছু বাগানে ছোট আকারের চাপিল সুপারি দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি রবিবার ও বুধবার হাটের দিন ফকিরহাট উপজেলার সুপারির পাইকারি বাজারে সুপারির ব্যাপক সরবরাহ আসছে। চাষিরা থলে ও বস্তায় ভরে সুপারি নিয়ে আসছে বাজারে। অনেকে ভ্যান ও ট্রলি ভরে সুপারি নিয়ে পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য এসেছেন। পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা দরদাম শেষে চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে তা আকার অনুযায়ী গ্রেডিং করেন।
বাজারের বিউটি ভান্ডার নামের আড়তের মালিক শেখ আনোয়ার হোসেন জানান, পাকা সুপারি তিনটি গ্রেড দেখে তাঁরা কেনেন। এর মধ্যে প্রতি কুড়ি (স্থানীয় ভাষায় ২২ ঘা বা ২৬৪ পিস) বড় আকারের সুপারি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, মাঝারি আকারের সুপারি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা এবং ছোট আকারের সুপারি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে কেনেন। এছাড়া চাপিল বা চিকন সুপারি ও কাঁচা সুপারি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনে থাকেন।
পাইকারি আড়তদার ইসলাম শেখ জানান, এসব সুপারি কেনার পর তারা রাজধানী ছাড়াও রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান।
আরেক আড়তদার আব্দুল কুদ্দুস জানান, গতবছর সুপারি কম হওয়ায় দাম একটু বেশি ছিল। তবে এবছর প্রচুর ফলন হওয়ায় চাষিরা তুলনামূলক বেশি লাভবান হচ্ছেন।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও রোগ-পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এ বছর সুপারির ফলন আশানুরূপ হয়েছে। বাজারেও ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা।
কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, সঠিক জাতের ব্যবহার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা ও উন্নত জাতের চারা পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করাসহ অনাবাদি ও ছায়াযুক্ত জায়গায় সুপারি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। অনুকূল জলবায়ু ও মাটির কারণে ফকিরহাটে এ আবাদ আরো সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে।

