আপনি শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় পা দুটির কতটা যত্ন নেন? মনে নিশ্চয়ই উত্তর এসে গেছে? আদতেই অল্প। এ কারণেই আমাদের পদযুগলকে বলা যেতে পারে দেহের ‘ভারবাহী গাধা’। জানেন কি, পায়ের অযত্ন, অবহেলা হতে পারে প্যানক্রিয়াটিক বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের কারণ! অথচ পায়ের প্রতি সামান্য যত্নশীল হলে অনেক ক্ষেত্রেই প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার খুব কম সময়ই প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়ে। ছড়িয়েও পড়ে বেশ দ্রুত। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে বিশ্বব্যাপী ১০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। কিন্তু এটা নিয়ে তেমন কোনো হেলদোল নেই অনেকের। এসব কারণে এই ক্যানসারকে প্রায়ই নীরব ঘাতক বলা হয়।
অথচ পায়ের প্রতি সামান্য যত্নশীল হলে অনেক ক্ষেত্রেই প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে পায়ের চারটি লক্ষণ কখনো এড়িয়ে যেতে নেই। এসব হলো—নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ পা ব্যথা, ফোলা, লালচে ভাব ও হালকা গরম অনুভব করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চার লক্ষণ হতে পারে প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের কারণ। প্রাথমিক স্তরে এসব শনাক্ত করতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়। অনেক সময়ই তা বাঁচিয়ে দিতে পারে রোগীর প্রাণ।
১. পা ব্যথা
কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ পায়ে ব্যথা বা দীর্ঘদিন ধরে পায়ে ব্যথা প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের কারণ হতে পারে। শরীরের বা পায়ের কোথাও ধমনির ভেতর রক্ত জমাট বাঁধার কারণে এ রকম পা ব্যথা হতে পারে। একে বলা হয় ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা ডিভিটি।
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের ক্ষেত্রে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধায় কোনো গরমিল হলে ডিটিভি হতে পারে। আর এটা হতে পারে শরীরে ক্যানসার কোষের উপস্থিতির কারণে। এ কারণে পায়ে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কারণ ছাড়া ব্যথা অনুভূত হলে তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই।
২. পা ফোলা
এক অথবা দুই পায়েই হঠাৎ ফোলাভাব দেখা দিলে তা রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হয়ে থাকতে পারে। প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের ক্ষেত্রে এটি ডিটিভির সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার সুযোগ বেশি। অথবা এটি শরীরে ক্যানসার সৃষ্টিকারী টিউমারের কারণে হয়ে থাকতে পারে, যা রক্ত চলাচলে বাধা তৈরি করে। এ কারণে দীর্ঘদিন পায়ে ফোলাভাব থাকলে তা এড়িয়ে না গিয়ে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. পায়ে লালচে ভাব
পায়ে লালচে ভাব বা লাল আভা প্রদাহ বা সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়। আগেই বলা হয়েছে, প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের ক্ষেত্রে ডিটিভির কারণে পায়ে রক্ত জমাট বাঁধে। এই রক্ত জমাট প্রতিরোধ করতে শরীর এর বিরুদ্ধে লড়াই করে। তখন পায়ে লালচে ভাব দেখা দেয়।
৪. পায়ে হালকা গরম লাগা
পায়ের ফোলা জায়গা অথবা লালচে অংশে অনেক সময় হালকা গরম লাগতে পারে। এটি প্রদাহের লক্ষণ। এটিও হতে পারে ডিটিভি অথবা টিউমারের কারণে।
প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের ক্ষেত্রে ডিটিভির কারণে পায়ে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে শরীর লড়াই করে। তখন ফোলা বা লালচে অংশ হালকা উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।
টিউমারের কারণেও পায়ে রক্ত চলাচল বাধার সম্মুখীন হয়। এর বিরুদ্ধে শরীর লড়াই করলেও ফোলা জায়গা হালকা গরম হয়ে উঠতে পারে। এসব কারণে পা হালকা উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আরও কিছু বিষয়
পায়ের এসব লক্ষণ ছাড়াও পেট বা পিঠে ব্যথা, জন্ডিস, হঠাৎ ক্ষুধা ও ওজন কমে যাওয়া এবং বমি বা বমিভাবও প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
এসব লক্ষণের পাশাপাশি পায়ের এই চার বিষয়ের প্রতি যত্নশীল হলে ঠেকানো যেতে পারে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের মতো নীরব ঘাতক। তাই প্রতিদিন সুস্থ থাকতে, পায়ের যত্ন নিয়মিত নিন।

