৭ ডিসে ২০২৫, রবি

সাভারে ইটভাটা শ্রমিকদের আড়াই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ, তীব্র যানজটে ভোগান্তি

ঢাকার সাভারে আমিনবাজারের ভাঙাব্রিজ এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকেরা। এতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারপরও তাঁরা কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। পরে দুপুর ১২টার পর তাঁরা মহাসড়ক থেকে সরে যান।

আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা বলেন, সাভারের বিভিন্ন ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা, চিমনি গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ইটভাটা চালুসহ অভিযান বন্ধের দাবিতে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমিনবাজারের ভাঙাব্রিজ এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন বিভিন্ন ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকেরা। পরে তাঁরা মহাসড়কের উভয় পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ ঘটনায় সড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরা।

বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের উভয় পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় যানজট। আটকা পড়েছেন বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরা। অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা দিয়েছেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন। হ্যান্ডমাইক দিয়ে শ্রমিকেরা বলছেন, ‘ইটভাটা চলবে, গাড়ির চাকা ঘুরবে।’

আনিসুর রহমান নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা ছয় মাস ইটভাটায় কাজ করি। বাকি ছয় মাস বাড়িতে কাজ করি। ভাটা বন্ধ করলে খামু কী?’ সোহাগ নামের আরেকজন বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ইটভাটায় কাজ করি। সরকারি লোকজন আইসা ভাটা বন্ধ করে; জরিমানা নেয়। ইটভাটা চালাইতে দিতে হবে।’

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ইটভাটা চালু রাখার দাবিতে ইটভাটার মালিক-শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাঁরা সড়ক থেকে সরে গেছেন।

সাভার উপজেলাকে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষণা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গত ১৭ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর এসংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করে। পরিপত্রে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের সার্বক্ষণিক বায়ুমান পরিবীক্ষণ কেন্দ্রগুলোর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে সাভারের বায়ুর বার্ষিক মানমাত্রা জাতীয় বার্ষিক নির্ধারিত মানমাত্রার প্রায় তিন গুণ অতিক্রম করেছে। জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় ঢাকা জেলার অন্তর্ভুক্ত সাভার উপজেলা মারাত্মক বায়ুদূষণযুক্ত এলাকায় পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রায় পাঁচ মাস উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমে বায়ু প্রবাহিত হয়। ফলে সাভার উপজেলায় সৃষ্ট বায়ুদূষণ ঢাকা শহরে প্রবেশ করে। এটি ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের তীব্রতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের ওপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২-এর ক্ষমতাবলে সমগ্র সাভার উপজেলাকে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষণা করা হলো।

পরিপত্র অনুযায়ী, ডিগ্রেডেড এয়ারশেডঘোষিত এলাকাটিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বায়ুদূষণ সৃষ্টিকারী কতকগুলো বিষয় পরিচালনা বা সম্পাদন নিষিদ্ধ করা হয়। এগুলো হলো, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে সাভার উপজেলার অন্তর্গত সব ধরনের ইটভাটায় (টানেল ও হাইব্রিড হফম্যান কিলন ছাড়া) ইট পোড়ানোসহ ইট প্রস্তুতের কার্যক্রম পরিচালনা, উন্মুক্ত অবস্থায় কঠিন বর্জ্য পোড়ানো, বায়ুদূষণ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছেসব ধরনের নতুন শিল্পকারখানার অনুকূলে অবস্থানগত ও পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান।

ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছিল, সাভার উপজেলায় ১০৭টি ইটভাটা আছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি ইটভাটায় পরিবেশবান্ধব উপায়ে ইট তৈরি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *