আজকের প্রযুক্তিবিশ্বে যে বিপ্লব চলছে, কয়েকজন দূরদর্শী উদ্যোক্তাই তার মূল চালিকা শক্তি। শুধু কোম্পানি গড়ে তুলে তাঁরা থামেননি; বরং বদলে দিয়েছেন মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন, যোগাযোগ, কেনাকাটা, ভ্রমণ ও বিনোদনের ধরন। ই-কমার্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্মার্টফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁদের অবদান যুগান্তকারী। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছেন তাঁরা। এমন শীর্ষ ১০ প্রযুক্তি উদ্যোক্তাকে নিয়ে এ আয়োজন।
১. ইলন মাস্ক
ইলন মাস্ক বৈদ্যুতিক গাড়ি ও মহাকাশ প্রযুক্তিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন।
টেসলার (২০০৪) মাধ্যমে বৈদ্যুতিক গাড়িকে জনপ্রিয় করেছেন। স্পেসএক্সের (২০০২) মাধ্যমে বাণিজ্যিক মহাকাশযাত্রা সম্ভব হয়েছে।
নিউরালিংক ও এক্সএআইয়ের মাধ্যমে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মস্তিষ্ক-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী মাস্ক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪৬৮ বিলিয়ন ডলার।
২ . জেফ বেজোস
যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের জেফ বেজোস বিশ্ববিখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন শুরু করেছিলেন একটি গ্যারেজ থেকে। আজ এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি তারা অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসের মাধ্যমে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বেজোসের মনোযোগ প্রযুক্তি, কেনাকাটা ও সংবাদমাধ্যমে বিনিয়োগের দিকে নিবদ্ধ। ১৯৯৪ সালে কাজ শুরু করা অ্যামাজনের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২৪৬ বিলিয়ন ডলার।
৩ . মার্ক জাকারবার্গ
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০০৪ সালে ফেসবুকের (বর্তমানে মেটা প্ল্যাটফর্মস) কাজ শুরু করেন মার্ক জাকারবার্গ। তাঁর নেতৃত্বে ফেসবুক বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
মেটা প্ল্যাটফর্মসের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল বাস্তবতা ও ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগে নতুন দিগন্ত খুলে গেছে। জাকারবার্গের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২১৬ বিলিয়ন ডলার।
৪ . ল্যারি পেজ
সার্চ ইঞ্জিন গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২২৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ১৯৯৮ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সের্গেই ব্রিনের সঙ্গে মিলে গুগল তৈরি করেন।
সার্চ ইঞ্জিনটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি জায়ান্টে পরিণত হয়েছে। গুগলের মাতৃ-কোম্পানি অ্যালফাবেটের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রকল্প পরিচালনা করছেন ল্যারি পেজ।
৫ . সের্গেই ব্রিন
রাশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী সের্গেই ব্রিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ল্যারি পেজের সঙ্গে মিলে গুগল তৈরি করেন। তাঁর নেতৃত্বে গুগল শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়; বরং ক্লাউড, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অন্যান্য প্রযুক্তিক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক জায়ান্টে পরিণত হয়েছে।
সের্গেই ব্রিনের মোট সম্পদ আনুমানিক ২১১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
৬ . বিল গেটস
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের মোট সম্পদের পরিমাণ ১০৪ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। তিনি ব্যক্তিগত কম্পিউটার বিপ্লবের অন্যতম পথপ্রদর্শক।
বর্তমানে গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিল গেটস বিশ্ব স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। এই মার্কিন ধনকুবেরের প্রযুক্তি ও দাতব্য কর্মকাণ্ডের প্রভাব বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত।
৭ . জ্যাক মা
১৯৯৯ সালে আলিবাবা শুরুর মাধ্যমে চীনের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় বিপ্লব আনেন জ্যাক মা। আলিবাবা ও অ্যান্ট গ্রুপের এই সহপ্রতিষ্ঠাতা চীনের ই-কমার্সের পাশাপাশি আর্থিক প্রযুক্তি (ফিনটেক) খাতের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছেন। বর্তমানে তিনি ব্যবসায় সরাসরি সক্রিয় নন। তাঁর মোট সম্পদ প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার।
৮ . ব্রায়ান চেস্কি
২০০৮ সালে এয়ারবিএনবি শুরু করেন মার্কিন উদ্যোক্তা ব্রায়ান চেস্কি। পর্যটকেরা হোটেলের পরিবর্তে মানুষের বাড়ি বা রুম ভাড়ার করার ক্ষেত্রে এই প্ল্যাটফর্ম একটি অভিনব উদ্ভাবন।
চেস্কির প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি পর্যটক বাড়ি বা ঘর ভাড়া নিয়ে সাশ্রয়ী খরচে ভ্রমণ করতে পারছেন। এয়ারবিএনবি অর্থনীতি ও পর্যটনশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। ব্রায়ান চেস্কির মোট সম্পদ আনুমানিক ১৪ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার।
৯ . স্টিভ জবস
অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস মার্কিন উদ্যোক্তামহলে একটি প্রবাদপ্রতিম নাম। ১৯৭৬ সালে অ্যাপল শুরু করে কম্পিউটার, স্মার্টফোন ও ডিজিটাল মিউজিক প্লেয়ার–শিল্পে বিপ্লব এনেছেন তিনি।
অ্যাপল-২, ম্যাক, আইফোন ও আইপডের মাধ্যমে প্রযুক্তি ও নকশার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বদলে দেন। ২০১১ সালে প্রয়াত হলেও এখনো অ্যাপলের প্রতিটি নতুন পণ্যে স্টিভ জবসের সৃজনশীলতার ছাপ থাকে। মৃত্যুর আগে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
১০ . জ্যাক ডরসি
খুদে ব্লগ লেখার সাইট হিসেবে পরিচিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার (বর্তমানে এক্স) এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ও ফিনটেক কোম্পানি ব্লকের (পূর্বে স্কয়ার) সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক প্যাট্রিক ডরসি একবিংশ শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের একজন।
ডরসির উদ্যোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অর্থ লেনদেনে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাঁর মোট সম্পদ প্রায় ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস ও ব্লুমবার্গ অবলম্বনে তৈরি

