৭ ডিসে ২০২৫, রবি

ভারতকে তো হারানো গেল, কোন পথে হামজার বাংলাদেশ

রাত ১১টার কাঁটা ছুঁই ছুঁইসাংবাদিকদের ভরা কক্ষে হামজা চৌধুরী প্রবেশ করতেই করতালিতে ফেটে পড়লেন সবাইভারতকে হারানোর আনন্দে মাতোয়ারা সংবাদ সম্মেলন কক্ষসামনে বসতেই অভিনন্দন জানানো হলো হামজা চৌধুরীকে, গত রাতেগোলে বাংলাদেশের জয়ের অন্যতম নায়ককে

২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জয়ে জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি তখনো কাঁপছে। লাল-সবুজের ঢেউয়ে ভেসেছে দেশের ফুটবলতীর্থ। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় শুধুই একটা জয় নয়, এর চেয়েও বেশি কিছু। যখন আপনি জানবেন ভারতের কাছে হারের বা ড্র করার একের পর হতাশার গল্প, যখন জানবেন জিততে জিততে ড্র কিংবা হেরে মন খারাপ করে মাঠ ছাড়ার কাহিনি আছে অনেক, তখন এই জয় শুধু একটি জয়েই সীমাবদ্ধ থাকে নাহয়ে ওঠে অনেক আবেগময়।

২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে যে আবেগে ভেসেছিল গোটা দেশ; মতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলে ভারতকে হারিয়ে সাফের ফাইনালে উঠেছিল জর্জ কোটানের বাংলাদেশ। এরপর গত ২২ বছরের দুই দলের ১০ সাক্ষাতে বাংলাদেশ একটি ম্যাচও জেতেনি৬ ড্র, ৪ হার। প্রায় দুই যুগ পর আবার ভারতকে হারাতে পারল লালসবুজের দল। সেদিক থেকে এই জয়ের মাহাত্ম্য অনেক। আর দশটা জয় থেকে পুরোপুরি আলাদা, যেখানে মিশে আছে গর্ব, অপেক্ষা ফুরোনোর তৃপ্তিও

এমন উৎসবের রাতেই আরেকবার আলোয় উঠে এলেন ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া, লেস্টার সিটির হয়ে এফএ কাপ জেতা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। গতকাল ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের এই ম্যাচে গোল করে হয়তো নায়ক শেখ মোরছালিন, তবে দুরন্ত হেডে নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে হামজাও কেড়ে নেন আলো। অবশ্য হাজমার জন্য এ আর নতুন কি! বাংলাদেশের হয়ে আগের ছয় ম্যাচে চার গোল করে আলো ছড়িয়েছেন তো আগেই।

শিলংয়ে ভারতের বিরুদ্ধে দারুণ পারফরম্যান্স, ঢাকায় দ্বিতীয় ম্যাচেই গোলতারপর হামজা বাংলাদেশ দলের শক্তির নিয়মিত উৎস। ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে দুর্দান্ত হেড, হংকং চায়নার বিপক্ষে ফ্রিকিক, নেপালের বিপক্ষে পেনাল্টি ও অবিস্মরণীয় বাইসাইকেল কিকে গোল। প্রতিটি গোলেই নতুন করে স্বপ্ন দেখানো। হামজা যেন নেমে এসেছেন নতুন আলোর মতো। তাঁকে অনুসরণ করতে, তাঁকে নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করতে লেস্টার সিটির ইউটিউব থেকে প্রতিনিধি এসেছেন ঢাকায়, সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মী। তাঁরা ঢাকায় এসে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন হামজাকে। আর এতে বাংলাদেশের ফুটবলের বিজ্ঞাপন হচ্ছে বিদেশে।

শুধু ‘পোস্টার বয়’ হামজা নন, আজ জাতীয় দলে প্রবাসী ফুটবলার সাতজনজামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজী, কাজেম শাহ, হামজা চৌধুরী, ফাহামিদুল ইসলাম, শমিত সোম এবং সর্বশেষ যোগ দিয়েছেন কিউবা মিচেল। তাঁদের আগমন এক নতুন সম্ভাবনার আভাস দিচ্ছে নিঃসন্দেহে। দল হয়েছে শক্তিশালী। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এই বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বাড়তি সমীহ পাচ্ছে। সেটি শুধু হামজার মতো বিশ্বমানের ফুটবলার আছেন বলেই নয়, একটা দল হয়ে খেলতে পারার কারণেও।

এটিকে বাংলাদেশে ফুটবলবিপ্লবের পূর্ণতা দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ বলছেন অনেকে। বলতেই পারেন। বাংলাদেশ নিজেদের শক্তিটা দেখিয়েছে। মানুষের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে পেরেছে যে আরও কিছুটা সামনে এগোনো সম্ভব। যদিও বাংলাদেশের আপাতত কোনো ম্যাচ নেই। আগামী ৩১ মার্চ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে শেষ ম্যাচ। তারপর বাংলাদেশ কোথায় খেলবে, কোন প্রতিযোগিতায় খেলবে, তা এখনো অজানা।

তবে এটা জানা যে এই বাংলাদেশ লড়াকুযারা গোল করে ৭৯ মিনিট তা ধরে রাখার দৃঢ়তা দেখাতে পারে। এই বাংলাদেশের খেলা দেখতে মাঠে ছোটেন দর্শক। কালোবাজারিতে ৬০০ টাকার টিকিট বিক্রি হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকায়। যাঁরা কখনো ফুটবল দেখতেন না, তাঁদের কাছেও ফুটবল এখন বেশ আকর্ষণীয়। ঢাকার রাস্তায় ফুটবল জনতার মিছিল হচ্ছে। কাল ভারত ম্যাচের আগে স্টেডিয়াম এলাকায় তেমন মিছিল দেখে মুগ্ধ হতে হয়েছে। অনেক নারী দর্শক মাঠে যাচ্ছেন ফুটবল দেখতে। সবার মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, স্বপ্ন আর বিশ্বাস; বাংলাদেশ পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *