৭ ডিসে ২০২৫, রবি

হেডের ঝড় দেখেছেন, সবচেয়ে কম বলের সেই সব টেস্ট সেঞ্চুরি দেখেছেন কি

ইংল্যান্ড কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মনে হয়েছিল, জেতার জন্য ২০৪ রান যথেষ্ট। অস্ট্রেলিয়াকে এর কমেই আটকে দিতে পারবে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ারই সাবেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টের মনে হয়েছে, রানটা যথেষ্টর চেয়েও বেশি। তাঁর মতে, ইংল্যান্ড ৩০ রানের মতো বেশি করেছে। ম্যাককালামকে সেটা বলেছেনও।

গতকাল পার্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ম্যাককালাম আর গিলক্রিস্টের এই ভাবাভাবিটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার রানতাড়া শুরু হওয়ার আগে। যে ম্যাচে তিনটি ইনিংস শেষ হয়েছে ১৫০-এর আশপাশে (ইংল্যান্ড ১৭২ ও ১৬৪, অস্ট্রেলিয়া ১৩২), সে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ২০০ রান তাড়া করা চাট্টিখানি কথা তো নয়

কিন্তু ম্যাককালাম আর গিলক্রিস্টের ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করেছেন ট্রাভিস হেড। অস্ট্রেলিয়ার ৩১ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়েছেন ইংলিশ বোলারদের ওপর। ফল, মাত্র ২ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যপূরণ অস্ট্রেলিয়ার।

ইংল্যান্ডের জন্য হারের চেয়েও বড় যন্ত্রণা হওয়ার কথা হেডের তাণ্ডব চালানো ব্যাটিং। প্রথম ১৪ বলে মাত্র ৩ রান করা এই ব্যাটসম্যান পরের ৫৫ বলেই নিয়েছেন ৯৭ রান; সব মিলিয়ে ৬৯ বলে সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে রানতাড়ায় এত কম বলে সেঞ্চুরি আর কেউ করতে পারেননি। বিশ্ব রেকর্ড!

তবে এমন ঝোড়ো ইনিংস খেলার পরও হেড কিন্তু টেস্টের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান নন। তাঁর চেয়ে কম বল খেলে সেঞ্চুরির কীর্তি আছে আরও পাঁচজনের। যেখানে ১ নম্বর নামটি ওই ম্যাককালামেরই।

ইংল্যান্ড টেস্ট দলের কোচ ম্যাককালাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তাঁর শেষ ম্যাচ ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট। আর এই ম্যাচেই দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন ঘোষণা দিয়ে বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামা ম্যাককালাম।

তাও কী এক অসীম চাপের মধ্যে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ৭৪ রানে ৪ উইকেট চলে যাওয়ার পর মাঠে নামেন ম্যাককালাম। আর ওই পরিস্থিতিতে তিনি বেধড়ক পিটুনিতে ৫৪ বলেই ছুঁয়ে ফেলেন ১০০। ১৬টি চার, ৪টি ছক্কা।

কয়েক বছর ধরে সেই ম্যাককালামকে কোচ হিসেবে পেয়ে তাঁরই ধাঁচে ব্যাট করছে ইংল্যান্ড। কিন্তু কেউই এখন পর্যন্ত তাঁর রেকর্ডটা ভাঙতে পারেননি। ৯ বছর পার করেও এখন পর্যন্ত টেস্টের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা ম্যাককালামের।

সাবেক নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক একসঙ্গে দুজনের রেকর্ড ভেঙেছিলেন। একজন ভিভ রিচার্ডস, অন্যজন মিসবাহউলহক। ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে অ্যান্টিগায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ভিভ। সেটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংস, দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষ হতে তিন দিনের বেশি লেগে গেছে। ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট করার সময় হাতে রাখতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলে দ্রুতলয়ে, যেখানে ভিভই নেতৃত্ব দেন। ৫৮ বলের ইনিংসে ৭টি করে চার ও ছক্কায় ১১০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ভিভ, শেষ পর্যন্ত তাঁর দলও বড় ব্যবধানে (২৪০ রানে) জেতে।

১৯৮৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের নভেম্বরসাড়ে ২৮ বছর টিকেছিল ভিভের দ্রুততম সেঞ্চুরির একক রেকর্ড। দীর্ঘ সময় পর তাঁর রেকর্ডে ভাগ বসান পাকিস্তানের মিসবাহ। পাকিস্তান তখন ‘হোম ম্যাচ’ খেলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, আবুধাবির ম্যাচটিতে প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া।

ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেন মিসবাহ। এর মধ্যে প্রথম ইনিংসে তিন অঙ্কে পৌঁছান ১৬৬ বলে। ধীরগতির ব্যাটিংয়ের কারণে ‘টুকটুক’ নামে কুখ্যাতি পেয়ে যাওয়া এই ব্যাটসম্যানই দ্বিতীয় ইনিংসে রুদ্ররূপে আবির্ভূত হন। ৫৪ বলে ৯২ রানের পর মিচেল স্টার্ককে টানা দুই বলে চার মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ৫৬ বলেঠিক ভিভের মতোই।

মিসবাহর রেকর্ডছোঁয়া ম্যাচটি পাকিস্তান জেতে ৩৫৬ রানে, যা তখন পর্যন্ত টেস্টে রানের হিসাবে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় জয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *