৭ ডিসে ২০২৫, রবি

অতিরিক্ত কফি পানে শরীরে যেসব সমস্যা হতে পারে

সকাল শুরু হোক বা ব্যস্ত দিনের শেষেএক কাপ কফি অনেকের জন্যই ক্লান্তি দূর করার সহজ উপায়। কফির প্রধান উপাদান ক্যাফেইন, যা আমাদের সতেজ রাখতে সাহায্য করে। তবে পরিমিত মাত্রায় ক্যাফেইন সাধারণত ক্ষতিকর না হলেও অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অস্থিরতা, ঘুমে ব্যাঘাত, হজমের অস্বস্তি বা আচরণে পরিবর্তনএসবই ক্যাফেইন অতিমাত্রায় গ্রহণের প্রথম দিকের লক্ষণ। সময়মতো সতর্ক না হলে এগুলো ধীরে ধীরে মারাত্মক সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

পুষ্টিবিদ ড. নিসা জানান, অনেকেই বুঝতে পারেন না কত দ্রুত শরীরে ক্যাফেইন জমা হতে থাকে। সামান্য বেশি গ্রহণও স্নায়ুতন্ত্রকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করে ঘুম, হজম ও মুডের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শরীর যখন সতর্ক সংকেত দেয়, তা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। নিচে এমন ৫টি লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো দেখলে ক্যাফেইন কমানোর প্রয়োজন আছে বুঝবেন।

১. হাত কাঁপা, অস্থিরতা বা অকারণ দুশ্চিন্তা

অযথা হাত কাঁপা বা ভেতরে ভেতরে অস্থির লাগা ক্যাফেইনের অতিরিক্ত প্রভাবের সাধারণ লক্ষণ। ক্যাফেইন অ্যাডেনোসিন ব্লক করে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে বেশি সক্রিয় করে তোলে এবং অ্যাড্রেনালিন বাড়ায়, যার ফলে উদ্বেগ, বাড়তি চাপ ও মনোযোগের সমস্যা দেখা দেয়।

২. ঘুম কমে যাওয়া বা বারবার ভেঙে যাওয়া

বেশি কফি পানের কারণে ঘুম আসতে দেরি হয়, মাঝরাতে উঠে যাওয়া বা সকালে ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক। ক্যাফেইনের হাফ-লাইফ প্রায় ৫৬ ঘণ্টা হওয়ায় দেরি করে পান করলে গভীর ঘুম ব্যাহত হয়। এর ফলে প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হওয়া, মুডের সমস্যা ও সারাদিন ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

৩. হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া

অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণে বুক ধড়ফড় করতে পারে বা হঠাৎ হার্টবিট দ্রুত হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন হৃদযন্ত্রের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

৪. হজমে গোলমাল

বেশি কফি পানের ফলে অনেকেরই হজমে সমস্যা হয়। বারবার টয়লেটে যাওয়া, অ্যাসিডিটি, পেটব্যথা বা হার্টবার্ন এর মধ্যে অন্যতম। ক্যাফেইনের ডাইউরেটিক ও ল্যাক্সেটিভ প্রভাব পাকস্থলীর অ্যাসিড বাড়ায়, ফলে পানিশূন্যতা, পুষ্টি শোষণে ব্যাঘাত এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫. মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন

ক্যাফেইন যদিও কিছু সময় মাথাব্যথা কমায়, কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে এটি মাইগ্রেনের ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। এমনকি কেউ নিয়মিত কফি খেলে হঠাৎ কমিয়ে দিলে ‘রিবাউন্ড’ মাথাব্যথাও হতে পারে, কারণ ক্যাফেইন মস্তিষ্কের রক্তনালি সংকুচিত করে এবং না খেলে তা আবার প্রসারিত হয়।

ক্যাফেইন কমানোর নিরাপদ উপায়

ধীরে কমান:৪ দিন পরপর ২৫৫০ মিগ্রা করে ক্যাফেইন কমালে মাথাব্যথা ও ক্লান্তি কম অনুভূত হবে।

স্বাস্থ্যকর বিকল্প: কফির পরিবর্তে গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি বা ডিক্যাফ কফি চেষ্টা করতে পারেন।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন: শরীর হাইড্রেটেড থাকলে মাথাব্যথা ও অবসাদ কমে।

ক্যাফেইন কারফিউ ঠিক করুন: দুপুর ১২টা থেকে ২টার পর ক্যাফেইন গ্রহণ বন্ধ রাখুন, যাতে ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে।

যদি অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, বুকে চাপ, তীব্র উদ্বেগ বা প্যানিক অ্যাটাকের মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ক্যাফেইন সঠিক মাত্রায় উপকারী হলেও অতিরিক্ত গ্রহণ শরীর ও মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই শরীরের সংকেতগুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনুন এবং প্রয়োজন হলে ক্যাফেইন কমিয়ে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *