৭ ডিসে ২০২৫, রবি

মিথিলা মিস ইউনিভার্সে কত ভোট পেয়েছেন, দেশে ফিরে জানালেন

থাইল্যান্ডে ১৯ দিনের মিস ইউনিভার্স মিশন। আগেপরে ৯ দিনসব মিলিয়ে চার সপ্তাহ থাইল্যান্ডে কেটেছে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন তানজিয়া জামান মিথিলার। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দেশে ফিরেছেন। কথা বলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। দেশের মানুষ ও বিনোদন অঙ্গনে যাঁরা তাঁর প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসা জানিয়েছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মিথিলা। মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় সেরার মুকুট জিততে না পারলেও সেরা ত্রিশে থাকাটা নিয়ে সন্তুষ্ট বাংলাদেশি এই মডেল ও অভিনয়শিল্পী।

৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ তানজিয়া জামান মিথিলা অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে থাইল্যান্ডে যান। ২ নভেম্বর থেকে শুরু হয় ক্যাম্প রাউন্ড। একটা স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন, আশা আর সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন, মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় কিছু একটা হবেন। কিন্তু সেরা ৩০এ জায়গা করে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তবে ক্লোজডোর ভোটিংয়ে তিনি হারিয়েছেন মিস ইউনিভার্স মুকুটজয়ী মিস মেক্সিক ফাতিমা বশকে।

মিথিলা বলেন, ‘প্রথম ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে ঠিকঠাক উপস্থাপন। বাংলাদেশের পতাকা বহন করছি। বাংলাদেশকে উপস্থাপনের জন্য যত কষ্ট করা দরকার, পরিশ্রম করা দরকারতা আমি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত করে গেছি। আমার এই পথচলায় প্রথম সারির তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবাই আমার প্রতি যে বিশ্বাস, ভালোবাসা দেখিয়েছেনতাতে আমি অভিভূত।’

বিমানবন্দরে নেমে মিথিলা বললেন, ‘বাংলাদেশের হয়ে যতটা অবস্থান করা সম্ভব, তা আমি চেষ্টা করেছি। আমি এটা উপলব্ধি করতে পেরেছি, এ ক্ষেত্রটায় আমাদের আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে, যাতে পরে যে প্রতিযোগী এই প্ল্যাটফর্মে অংশ নেবে, তার জন্য পথচলাটা যেন সহজ হয়।’

এবারের মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে বিশ্বের ১২১ দেশের প্রতিযোগী। মিথিলা বললেন, ‘এটা এমন একটা প্রতিযোগিতা, যেখানে ৫০ থেকে ৬০ বছর চেষ্টা করেও অনেক দেশ আছে তারা পজিশন পায়নি। এমন উদাহরণ অনেক আছে। তারপরও তারা অংশ নিচ্ছে। আমি যেটা দেখেছি, একটা দেশের সরকারি পর্যায়ে মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক থাকতে হয়। দেশের মানুষের সমর্থন থাকতে হয়, যেটা আমি আন্তরিকভাবে পেয়েছি। আমরা আশা করছি, পরবর্তী সময়ে যেসব প্রতিযোগী যাবে, তাদের আমরা সহযোগিতা করতে পারব, পরামর্শ দিতে পারব। আমরা এবার কিন্তু এক রকম দেখিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশিরা চাইলে একসঙ্গে কী করতে পারি। যারা প্রতিযোগিতায় আমাকে ভোট দিয়েছেন, সত্যি বলতে তাঁরা আসলে আমাকে দেননি, দিয়েছেন বাংলাদেশকে। আমি নিজেও মিথিলাকে রিপ্রেজেন্ট করতে যাইনি, বাংলাদেশকে করেছি। বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরতে গিয়েছি।’

দেশে ফেরার পর নিজে বেশ আবেগাপ্লুত বলেও জানালেন মিথিলা। বললেন, ‘এর আগে অনেকবার অনেক দেশে গিয়েছি। এসেছি। কিন্তু এবার বিমানবন্দরে এসে এমন অনুভূতি হয়েছে, যা এর আগে কখনো হয়নি। আমি খুবই ইমোশনাল। সবাই আমাকে এভাবে ভালোবাসবে, এভাবে বিশ্বাস করবে, কখনো কল্পনাই করিনি। প্রথমবারের মতো আমি বুঝতে পেরেছি, বাংলাদেশ কত বড় দেশ। কত মানুষের আবেগ নিয়ে আমি ওখানে কাজ করে এসেছিএই পথচলায় আমি শিখলাম, আমরা বাংলাদেশিরা কতটা শক্তিশালীআমরা চাইলে কী না করতে পাারিবাংলাদেশের একজন প্রতিযোগীর জন্য ২০ লাখ ভোট করেছেএটা আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর মিথিলাকে বিকিনি পরা অবস্থায় দেখে অনেকে বাংলাদেশ থেকে তাঁর কড়া সমালোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে মিথিলা বলেন, ‘ক্লোজডোর ইন্টারভিউ, ইভিনিং গাউন, ন্যাশনাল কস্টিউম, সুইমস্যুট ওয়্যার এই চারটি জিনিসের ওপর নম্বর দেওয়া হয়এগুলো যদি কেউ ঠিকমতো করতে না পারে, তাহলে সে সেরা ৩০ কিংবা টপ পজিশনে যেতে পারবে নাআমি সেরা ৩০ হয়েছি, এটাও পারতাম না যদি সুইমস্যুট ওয়্যার না করতামবিকিনি বাংলাদেশ থেকে আমি প্রথম পরিনি, আগেও অনেকে পরেছেআমি কোনোভাবে আমার দেশকে ছোট করিনি

এদিকে নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ‘মিস ইউনিভার্স ২০২৫’। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে আয়োজক কর্তৃপক্ষের হাতে ‘অপমানিত’ হন মেক্সিকোর ফাতিমা বশ, যা নিয়ে প্রতিযোগীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সবকিছু পেছনে ফেলে বিজয়ী হন ২৫ বছর বয়সী এই সমাজকর্মী। তাঁকে মুকুট পরিয়ে দেন গত আসরের বিজয়ী ডেনমার্কের ভিক্টোরিয়া কেজার থেলভিগ। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফল ঘোষণার তিন দিন আগে দুই বিচারক পদত্যাগ করেন। তাঁদের একজন নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ‘অস্বচ্ছ’ বলে অভিযোগ তোলেন, যা নিয়ে আয়োজনজুড়ে ছিল অতিরিক্ত উত্তেজনা ও আলোচনার ঝড়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *