৭ ডিসে ২০২৫, রবি

বিজ্ঞানীরা জানালেন শুক্রের বায়ুমণ্ডল কেন এত দ্রুত ঘোরে

শুক্রগ্রহে এমন প্রবল ঝড়ো হাওয়া বইছে, যা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী হারিকেনের গতিকেও ছাড়িয়ে যায়। এসব বাতাস ঘণ্টায় ১০০ মিটারেরও বেশি গতিতে পুরো গ্রহকে ঘুরে আসে। পৃথিবীতে এমন ঘটনা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনলেও শুক্রগ্রহে এটি স্বাভাবিক একটি বৈশিষ্ট্য।

বিজ্ঞানীরা এই অস্বাভাবিক বাতাসকে ‘সুপাররোটেশন’ বলেন—অর্থাৎ গ্রহের পৃষ্ঠের তুলনায় বায়ুমণ্ডলের ঘূর্ণন অনেক দ্রুত হওয়া।

শুক্রগ্রহ নিজ অক্ষে একবার ঘুরতে সময় নেয় ২৪৩ পৃথিবী-দিন। কিন্তু তার বায়ুমণ্ডল মাত্র চার পৃথিবী-দিনে পুরো গ্রহ ঘুরে আসে। এত দ্রুত ঘূর্ণনের কারণ দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণার বিষয় ছিল।

নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সূর্যের তাপে তৈরি ‘দৈনিক বায়ু-জোয়ার’ বা ডায়ার্নাল টাইড (বায়ুমণ্ডলে প্রতিদিনের তাপের প্রভাবে ওঠানামা) শুক্রের এই অস্বাভাবিক বাতাসের প্রধান চালিকা শক্তি। এর পাশাপাশি সেমিডায়ার্নাল টাইড (দিনে দুইবার তাপজোয়ার), গ্রহজ তরঙ্গ ও উত্তর-দক্ষিণমুখী বায়ুপ্রবাহও ভূমিকা রাখে, তবে দৈনিক জোয়ারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

এই গবেষণার জন্য ২০০৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সংগ্রহ করা তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ভেনাস এক্সপ্রেস এবং জাপানের আকাতসুকি উপগ্রহ রেডিও তরঙ্গের বেঁকে যাওয়া (রেডিও অকালটেশন) বিশ্লেষণ করে শুক্রের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়। পাশাপাশি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে সুপাররোটেশন কীভাবে তৈরি হয়, সেটিও পরীক্ষা করেন গবেষকেরা।

নতুন তথ্য অনুযায়ী, সূর্যের তাপে তৈরি দৈনিক বায়ু-জোয়ার শুক্রের বায়ুমণ্ডলে শক্তি সঞ্চালন করে বাতাসকে দ্রুত ঘোরায়। ফলে গ্রহটি ধীরে ঘুরলেও তার বায়ুমণ্ডল চক্রবাতের গতিতে ছুটে চলে।

বিজ্ঞানীদের মতে, এই তাপজোয়ার কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে পারলে শুক্রের বায়ুমণ্ডল কেন এত দ্রুত ঘোরে, তার পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের আচরণ বোঝার পথও আরও সহজ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *