১৩ নভে ২০২৫, বৃহঃ

আলু নিয়ে বিপাকে প্রার্ন্তিক কৃষকরা

আলুর দাম গত বছর ভালো পাওয়ায় উৎপাদনে জোর দিয়েছিল কৃষক, সেটিই কাল হয়েছে। এ বছর লাভ দূরের কথা, উৎপাদন খরচের অর্ধেকও ঘরে তুলতে পারছে না। মৌসুমের শেষ দিকে এসে এখন সেই আলু কৃষকের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিমাগার মালিকরা চাষিদের আলটিমেটাম দিয়েছেন ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আলু বের করে নিতে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে গত আগস্টে ৫০ হাজার মেট্রিকটন আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। মিলগেটে প্রতি কেজি আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। গত ২৭ আগস্ট কৃষি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ঘোষণা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে এই আলু কেনার কথা। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এক কেজি আলুও কেনা হয়নি কৃষকের কাছ থেকে। এখন এই আলু নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কী করবে- সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সরকার।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ৫০ হাজার টন আলু কেনার সিদ্ধান্তটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং করে যৌথভাবেই নেওয়া হয়েছিল। টিসিবির মাধ্যমে এই আলু কেনার কথা। টিসিবি কিনবে কি না এখন এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে জানতে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা যায়নি। ফোনে মেসেজ দিলেও উত্তর পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আলু পচনশীল পণ্য। ৫০ হাজার টন আলু কিনে রাখার মতো হিমাগার নাই টিসিবির। এ ছাড়া ২২ টাকা কেজি দরে আলু কিনে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে বিক্রি করলে ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে।

জয়পুরহাটের আলু চাষি বুলবুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এবার আলু চাষ করে আমরা ফকির হয়ে গেছি। বাজারে গেলে দাম পাই না, হিমাগারেও আর রাখতে চাইছে না। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আলু হিমাগার থেকে না সরালে তারা গ্যাস বন্ধ করে দেবে। তখন (আলু) পচন ছাড়া আর গতি নাই। তিনি বলেন, কৃষি, বাণিজ্য, খাদ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় মিটিং করে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দুই মাসেও সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। সরকার কেজিপ্রতি দাম ২২ টাকা বেঁধে দিলেও, আমরা পাচ্ছি ১০ থেকে ১২ টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অন্তত ৫০ বার ফোন করেছি, মেসেজ করেছি। তারা ফোনও ধরেন না, সিদ্ধান্তও নেন না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টন। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টন। সে হিসেবে প্রায় ২৩ লাখ মেট্রিকটন আলু বেশি উৎপাদন হয়েছে। হিমাগার মালিক ও কৃষকদের তথ্যমতে আগের বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩০ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হয়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। কৃষকরা বলছেন, হিমাগার ভাড়া, পরিবহন, শ্রমিক ও অপচয় ব্যয় ধরে প্রতি কেজিতে আলুতে কৃষকের খরচ পড়ছে প্রায় ২৫ টাকা। আর সেই আলু হিমাগার গেটে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে প্রতি কেজি আলুতে কৃষকের লোকসান কমবেশি ১৫ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *