১৫ নভে ২০২৫, শনি

প্রথমবারের মতো দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধারের প্রযুক্তি উদ্ভাবন

বিশ্বে প্রথমবারের মতো একটি স্টার্টআপ দাবি করেছে, তারা এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে যা দৃষ্টিশক্তি হারানো মানুষদের আবার দেখার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারে।

স্টার্টআপটির বিজ্ঞানীরা একটি রেটিনা ইমপ্লান্ট বা চোখের পর্দায় বসানো যন্ত্র তৈরি করেছেন, যা দৃষ্টি হারানো মানুষদের দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধারের সক্ষমতা দিতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

এই যুগান্তকারী উদ্ভাবন এসেছে ইলন মাস্কের স্টার্টআপ নিউরালিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী ‘সায়েন্স কর্পোরেশন’-এর হাত ধরে। তাদের প্রযুক্তি ‘আর্টিফিশিয়াল ভিশন’ বা কৃত্রিম দৃষ্টি নামে পরিচিত।

ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কৃত্রিম দৃষ্টি ব্যবহার করে ‘ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন’ (এএমডি) রোগীরা লেখা পড়তে ও ক্রসওয়ার্ডের মতো ধাঁধা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন।

এএমডি মূলত প্রবীণদের হয়ে থাকে। এই রোগে চোখের রেটিনার ম্যাকুলা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানুষের কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি বা সরাসরি সামনের দিকে দেখার ক্ষমতা কমে যায় বা নষ্ট হয়, যা অপরিবর্তনীয় অন্ধত্বের অন্যতম কারণ।

‘প্রিমা’ নামের নতুন ‘ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেইস’ একটি সিস্টেম যার মধ্যে ক্যামেরা লাগানো এক জোড়া চশমা রয়েছে। চশমাটি তারবিহীনভাবে রেটিনার নিচে বসানো চিপে সংকেত পাঠায়।

সহজভাবে বলতে গেলে, এই প্রযুক্তি মূলত দুটি অংশের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে। প্রিমা চশমা ক্যামেরার মাধ্যমে বাইরের দৃশ্য দেখে এবং তা সংকেতে রূপান্তরিত করে। চিপটি রোগীর চোখের রেটিনার ঠিক নিচে অস্ত্রোপচার করে বসানো হয়, যা সংকেতগুলো মস্তিষ্কে পাঠায়। এর ফলে রোগী আংশিক বা কৃত্রিম দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান।

এক বছর ধরে এএমডি রোগীদের ওপর পরীক্ষার পর দেখা গেছে, ‘প্রিমা’ সিস্টেম ব্যবহার করে তারা সংখ্যা ও শব্দ পড়তে সক্ষম হয়েছেন।

৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এএমডি হলো দৃষ্টিশক্তি হারানোর সবচেয়ে সাধারণ রোগ। বিশ্বজুড়ে ৫০ লাখের বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। রোগটির কারণে মানুষ কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন, ফলে পড়া, গাড়ি চালানো বা মুখ চেনা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

‘প্রিমা’ প্রযুক্তির আগ পর্যন্ত চিকিৎসকরা এএমডি রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় করতে বা হারানো দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারতেন না। আগের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো কেবল রোগ বিস্তারের গতি কমাতে সক্ষম, যাতে দৃষ্টিশক্তি আরও খারাপ না হয়।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ক্লিনিকাল ট্রায়ালে ৩৮ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর প্রযুক্তিটি পরীক্ষা করা হয়েছে। ১২ মাস ব্যবহার করার পর ৮০ শতাংশের বেশি রোগী ‘ক্লিনিক্যালি মিনিংফুল ইমপ্রুভমেন্ট’ বা অর্থপূর্ণ উন্নতি পেয়েছেন। এই উন্নতি তাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লেগেছে এবং চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এনেছে।

‘সায়েন্স কর্পোরেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ম্যাক হোডাক বলেছেন, ‘এই যুগান্তকারী সাফল্য আমাদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তির প্রতি অঙ্গীকারকেই তুলে ধরে, যা অসহায় রোগীদের মধ্যে আশা জাগায় এবং তাদের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ বদলে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।

‘প্রিমা রোগীদের জন্য দৃষ্টিশক্তি পুনরায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলেছে এবং এতে আমরা অত্যন্ত উৎসাহিত।’

ম্যাক হোডাক নিউরালিংকের সহ-প্রতিষ্ঠাতারও একজন। যদিও নিউরালিংকের লক্ষ্যও মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা, এখনও তারা এমন সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। নিউরালিংকের প্রাথমিক ব্রেইন ইন্টারফেইস চিপের প্রোটোটাইপ শুধু পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের উপর ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে তারা মস্তিষ্কের সংকেতের মাধ্যমে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

‘সাবরেটিনাল ফটোভোলটাইক ইমপ্লান্ট টু রিস্টোর ভিশন ইন জিওগ্রাফিক অ্যাট্রোফি ডু টু এএমডি’ শিরোনামে এই নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিস্তারিত গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *