১৪ নভে ২০২৫, শুক্র

মা-বাবার মৃত্যুর পর যেসব কারণে ভাইবোনেরা দূরে সরে যান

ভাইবোনেরা যে যেখানেই থাকুন না কেন, মা-বাবার টানে একসঙ্গে হন। উৎসব–আয়োজনে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরেন। যোগাযোগ থাকে অন্যান্য সময়েও। অথচ মা-বাবা যখন থাকেন না, তখন অনেক পরিবারের চিত্রই বদলে যায়। কিন্তু কেন? বহু পরিবারেই ভাইবোনের দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায় সম্পত্তি। তবে এর বাইরেও থাকে অন্যান্য কারণ। কখনো সমস্যাটা গুরুতর, আবার কখনো নিতান্তই ছোটখাটো কোনো বিষয় বড় হয়ে দেখা দেয়।

অনেক দিন দেখা হয় না

রক্তের সম্পর্ক কখনো শেষ হয়ে যায় না। তবে মা-বাবা কেউই যখন থাকেন না, তখন অনেকেরই মনে হয়, সম্পর্কের সুতাটা বুঝি ছিঁড়ে গেছে। মা বেঁচে থাকতে হয়তো কোনো নির্দিষ্ট দিনে সবাইকে বাড়িতে ডাকতেন ভালোমন্দ খাওয়াতে। হয়তো বাবা বলতেন, মাসের একটা নির্দিষ্ট দিন তিনি নাতি-নাতনিদের দেখতে চান। মা-বাবাই যদি না থাকেন, তখন আর সেসব আয়োজন করা হয়ে ওঠে না। ভাইবোনেদের দেখাও হয় না আগের মতো। চোখের আড়ালে থাকতে থাকতে ভাইবোনেরা একসময় চলে যেতে পারেন মনের আড়ালেও। তবে আদতে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট কারণই থাকে না এসব ক্ষেত্রে।

দায়িত্বের বোঝায়

পরিবারের আর্থিক প্রয়োজনে কোনো একজনকে হয়তো অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিংবা ধরুন, মা-বাবা বেঁচে থাকতে এক সন্তান তাঁকে দেখভাল করতেন। সেই সময়টায় ভাইবোনেরা কে কী ভূমিকা রেখেছেন, সেই বিষয় নিয়েও তাঁদের মৃত্যুর পর হতে পারে অশান্তি। এমনকি মা-বাবার শেষ বয়সে তাঁদের দেখভাল করতে গিয়ে তাঁদের কাছ থেকে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, এমন বিষয়ও উঠে আসতে পারে। এমন ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ভাইবোনেদের সম্পর্ক খারাপ হয়।

শৈশব থেকে শুরু

মা-বাবার বৈষম্যমূলক আচরণও ভাইবোনেদের দ্বন্দ্বের উৎস হতে পারে। কখনো দেখা যায়, বড় সন্তান একটু বেশি আদর পেয়েছেন কিংবা ছোট সন্তানকে একটু বেশি আহ্লাদ দিচ্ছেন। কেউ পড়ালেখায় ভালো হলে তাকে অতিরিক্ত প্রশংসা করছেন, উল্টোটা হলে ভয়াবহ তিরস্কার। বিভাজন সৃষ্টি হলে সেটার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় ভবিষ্যতে। মা-বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় অনেকেই মনের এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ করেন না। তাঁদের কথা ভেবে স্বাভাবিক সম্পর্ক ধরে রাখার চেষ্টা চলে তখন। মা-বাবা দুজনেরই মৃত্যু হলে সেই দায়টাও যেন থাকে না।

মৃত্যু থেকেও হতে পারে শুরু

মা-বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কোথায় এবং কীভাবে হবে, এ নিয়ে বিরোধ দেখা দিতে পারে। কেউ হয়তো চান বিদেশে থাকা আপনজন পৌঁছানোর আগে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া না করতে, কেউ চান মৃতের আত্মার শান্তি নিশ্চিত করতে দ্রুত সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে। এসব নিয়ে একটা চাপা কষ্ট থেকে যেতে পারে বহুদিন। নিজেকে গুরুত্বহীন ভাবতে পারেন কেউ।

তবে সবাই এক নয়…

এমন অনেক পরিবারই আছে, যেখানে মা-বাবা না থাকলেও তাঁদের পারিবারিক ধারাটা কোনো না কোনোভাবে বজায় রাখেন ভাইবোনেরা। অহেতুক রেষারেষির জায়গা নেই সেখানে। ভুল–বোঝাবুঝি হলেও মিটিয়ে ফেলা গেলে সেটা করে নিলেই ভালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *