দেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৮ জন। ৩ হাজার ৫২৭ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন। মজুত আছে পর্যাপ্ত ত্রাণ। দুর্গত এলাকায় কাজ করছে ৭০টি মেডিকেল টিম। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, ছাত্র সমাজ ও বিজিবি চালাচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা। বন্যা-পরবর্তী সময়ে রোগ-ব্যাধি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য রয়েছে পূর্ব প্রস্তুতি। গতকাল সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। বন্যা পরিস্থিতির ক্রম উন্নতি হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ত্রাণসচিব কামরুল হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টিই আছে। ?এসব জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে পাঁচ, কুমিল্লায় চার, নোয়াখালী ও কক্সবাজারে তিনজন করে এবং ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন করে মোট ১৮ জন মারা যান। সচিব বলেন, এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৫২৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ মানুষ এবং ২১ হাজার ৬৯৫টি গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রমের বিষয়ে সচিব বলেন, বন্যাদুর্গত ১১ জেলায় মোট ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ১৫০ টন। শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার পিস। শিশুর খাদ্য কেনার জন্য ৩৫ লাখ এবং গো-খাদ্য কেনার জন্য ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, বন্যাকবলিত জেলার জেলা প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে জানিয়ে সচিব বলেন, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস নেই। এ সময়ে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই ও ধলাই নদী সংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস নেই। এ সময়ে এই অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী ও হালদা নদী সংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চিকিৎসাসেবা নিয়ে কামরুল হাসান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে চিকিৎসাসেবা দিতে ৭০টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। ফেনীতে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেখানে সেবা দিচ্ছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২-৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ছাত্র সমাজ ও বিজিবি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে? বলেও জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব। তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বন্যা উপদ্রুত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। উপদেষ্টা বর্তমানে ফেনীতে অবস্থান করছেন। ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি ভি-স্যাট চালু করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সচিব। তিনি বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ের মানুষ কিংবা গবাদি পশুর রোগ-ব্যাধি যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
আপনার মতামত লিখুন :