অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে মানুষের মস্তিষ্ক বড়। আর এর কারণ লুকিয়ে আছে মানুষের পেটে। এমনই তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আমাদের মস্তিষ্কের আকার বড় হওয়ার কারণ হতে পারে অন্ত্র বা পেটের মাইক্রোবায়োমের প্রভাব।
মাইক্রোবায়োম হচ্ছে অণুজীবের সম্প্রদায় যেমন ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। অন্ত্রের বিভিন্ন অনুজীব মানবদেহ ও মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এগুলো নিউরোট্রান্সমিটার’সহ বায়োঅ্যাকটিভ রাসায়নিক যৌগ তৈরি করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের অন্ত্রে শত শত কোটি অনুজীব রয়েছে, যা গ্লুকোজ তৈরিতে ব্যবহৃত বিপাকীয় শক্তি উৎপাদন করার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কের বিবর্তনে প্রভাব ফেলে।
প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র গবেষণায় দেখা গেছে, দেহের বায়োলজি ও বিবর্তনকে আকার দিতে পারে বিভিন্ন প্রাণীর অন্ত্র বা পেটের মধ্যে থাকা অনুজীব। কাজ করার জন্য মস্তিষ্কের প্রয়োজন হয় অনেক বেশি শক্তির, বিশেষ করে মানুষের মতো বড় মস্তিষ্কওয়ালা স্তন্যপায়ীদের বেলায়। দেহের ওজনের কেবল দুই শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও মস্তিষ্ক শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ শক্তি খরচের পেছনে কাজ করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট কসমস।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘মাইক্রোবিয়াল জিনোমিক্স’-এ। গবেষণা অনুসারে, মানুষের মতো বড় মস্তিষ্কওয়ালা প্রাণীরা কীভাবে দেহের প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা মেটায় তা বোঝার চাবিকাঠি হতে পারে পেটের মধ্যে থাকা নির্দিষ্ট কিছু অনুজীব।
এজন্য পরীক্ষাগারে ইঁদুরের উপর বিভিন্ন ধরনের প্রাইমেটের অনুজীব ইমপ্ল্যান্ট করেন গবেষকরা। এক্ষেত্রে কিছু ইঁদুরের দেহে মানুষ ও কাঠবিড়ালি বানর বা বড় মস্তিষ্কওয়ালা প্রাইমেটের অনুজীব ও অন্যকিছু ইঁদুরের দেহে ম্যাকাক বা ছোট মস্তিষ্কওয়ালা প্রাইমেটের অনুজীব প্রবেশ করান তারা। এরপর ৬০ দিন বা দুই মাস ধরে ইঁদুরের শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রাখেন গবেষকরা। এ সময় ইঁদুরের লিভারের কার্যকারিতা, ওজন বৃদ্ধি, দেহের চর্বির পরিমাণ ও অন্যান্য নানা বৈশিষ্ট্যের উপর নজর রাখেন তারা।
ম্যাকাক-এর অনুজীবওয়ালা ইঁদুরের তুলনায় মানুষ ও কাঠবিড়ালি বানর-এর জীবাণুওয়ালা ইঁদুরের দেহে শক্তি উৎপাদনের সক্ষমতা বেশি হওয়ার পাশাপাশি শক্তি খরচের সম্ভাবনাও দেখা গেছে বেশি।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, মানুষ ও বড় আকারের মস্তিষ্কওয়ালা অন্যান্য প্রাইমেটদের বিবর্তিত হতে সাহায্য করেছে অন্ত্র বা পেটে সক্ষমতার সঙ্গে কম সময়ে দ্রুত শক্তি উৎপাদন করে এমন বিভিন্ন অনুজীব। কারণ ওই সময় দেহকে চালানোর জন্য মস্তিষ্কের প্রয়োজন ছিল আরও বেশি শক্তির।
সূত্র – ডাউনটুআর্থ।
আপনার মতামত লিখুন :