জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট আয়োজনের জন্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুতি শুরু করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত গণভোট আয়োজনের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা বা চিঠি পায়নি ইসি সচিবালয়। নির্দেশনা না পেলেও কমিশনের কর্মকর্তারা নিজেরা বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছেন।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৩ নভেম্বর (গত বৃহস্পতিবার) সরকার এই ঘোষণা দেয়। সেদিন জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশও জারি করা হয়।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা আগেই দিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ইসির প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোটও আয়োজন করবে ইসি।
এবার সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁরা গণভোট দেওয়ারও সুযোগ পাবেন কি না, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রবাসীরা গণভোট দিতে পারবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ইসি এই সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি হলেও এখনো গণভোট আয়োজনের আইন বা অধ্যাদেশ হয়নি। এ জন্য আগে একটি নতুন আইন করতে হবে। সরকার এই আইন বা অধ্যাদেশ করবে। গণভোট পরিচালনার জন্য গণভোট আইনের অধীনে একটি বিধিমালা করারও প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জাতীয় নির্বাচনের মতো প্রবাসীদের গণভোটে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে গণভোটের জন্য সংশ্লিষ্ট আইন-বিধিতে এ-সংক্রান্ত বিধান রাখতে হবে। কারণ, জাতীয় সংসদ নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) দিয়ে গণভোট পরিচালনা করা যাবে না।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতিও কার্যত হয়ে যাচ্ছে। তবে একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট করতে হলে কিছু বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হবে।
ইসি সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের হিসাব করা হয়েছিল শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করতে ভোটকেন্দ্র না হলেও ভোটকক্ষ বা বুথের সংখ্যা বাড়াতে হবে। কারণ, দুটি ভোট দিতে সময় বেশি লাগবে। ভোটকেন্দ্র বা ভোটকক্ষ বাড়ানো হলে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়াতে হবে। সম্ভাব্য ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের পুল বা তালিকা করা আছে। কর্মকর্তা বাড়াতে খুব বেশি সমস্যা হবে না।
ইসি আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সারা দেশে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র এবং ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ (বুথ) নির্ধারণ করেছে। ইসি এবার গড়ে তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র এবং ৫০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি করে ও ৪০০ নারী ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করেছে।
ইসি সূত্র জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের গণভোট দেওয়ার সুযোগ দিলে ইসির তেমন বাড়তি খরচ হবে না। শুধু জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট পেপারের সঙ্গে গণভোটের ব্যালট পাঠাতে হবে। প্রবাসীদের কাছে ব্যালট পাঠানো হবে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগে। কিন্তু ভোট দেবেন প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর। তাই প্রবাসী ভোটারদের জন্য জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট আগেভাগেই ছাপানো হবে। সেখানে শুধু নিবন্ধিত দলগুলো এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীকগুলো থাকবে। প্রবাসীদের গণভোটের সুযোগ দেওয়া হলে তাদের জন্য গণভোটের ব্যালটও আগেভাগে ছাপাতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট এক রঙের এবং গণভোটের ব্যালট আরেক রঙের দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আছে।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটকেন্দ্র বাড়ানো হবে নাকি ভোটকক্ষ বা বুথ বাড়ানো হবে, এ বিষয়ে সার্বিক পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। ভোটকেন্দ্র বাড়ালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়বে। এ ছাড়া একই দিনে দুই ভোট আয়োজনের জন্য অতিরিক্ত কিছু স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং আরও কিছু নির্বাচনী সামগ্রীও প্রয়োজন হতে পারে।
গতকাল নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ইসি এখন পর্যন্ত গণভোটের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পায়নি। নির্দেশনা পাওয়ার পর ইসি কী নির্দেশনা পেয়েছে এবং কর্মপরিকল্পনা কী, তা জানানো হবে। গণভোটের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রস্তুতির বিষয়টি সার্বক্ষণিক। তাঁরা নিজেরা আলোচনা করছেন। তবে কী আলোচনা করছেন, তা তিনি জানাননি।

